৫২ অর্থনীতি ডেস্ক।।
বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেছেন, দেশের বন্ধ সরকারি বস্ত্রকলগুলো বিক্রি করা হবে না, বরং লিজ দেয়া হবে। বস্ত্রকল মালিকরা চাইলে তাদের মাঝে প্লট আকারে ভাগ করে দেয়া হবে। এজন্য প্রকল্প জমা দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ১৩তম ঢাকা আন্তর্জাতিক টেক্সটাইল অ্যান্ড গার্মেন্ট মেশিনারি এক্সিবিশন ২০১৬-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) ও তাইওয়ানের চান চাও ইন্টারন্যাশনাল যৌথভাবে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। চারদিনব্যাপী প্রদর্শনী প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
মির্জা আজম বলেন, এক সময় বেসরকারী খাতে ছেড়ে দেয়া সরকারী বস্ত্রকলের মধ্যে ৭০টি মত বস্ত্রকল বন্ধ হয়ে গেছে। বেসরকারী খাতে দেয়ার সময় যেসব শর্ত দেয়া হয়েছিল সেসব শর্ত ভঙ্গকারীদের থেকে বস্ত্রকল আবার ফিরিয়ে আনা হবে। এসব বস্ত্রকল প্রতিটি ৫০ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। ব্যবসায়ীরা চাইলে ছোট ছোট প্লটে এগুলো ব্যবসায়ীদের লিজ দেয়া হবে। এ ছাড়া ঢাকা, টাঙ্গাইল ও নারায়ণগঞ্জের আশপাশে প্রকল্প করতে চাইলে সরকার সহযোগিতা করবে।
বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেন, বস্ত্র ও পাটশিল্প এগিয়ে চলছে। এ খাত থেকে ২০২১ সালের মধ্যে পাঁচ হাজার কোটি ডলার রফতানি আয়ের উদ্দেশ্যে কাজ করতে হবে। বর্তমানে দেশের এ খাতে ১৩ হাজার বিদেশি নাগরিক কাজ করছেন। তারা যে বেতন পান তা দিয়ে তিন লাখ শ্রমিকের বেতন দেয়া সম্ভব। দক্ষ জনবল তৈরি করতে দেশের বড় জেলাগুলোয় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি করে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপন করা হবে। আর প্রত্যেক জেলায় ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি করে ভোকেশনাল কলেজ ও ইনস্টিটিউশন স্থাপন করা হবে। এরই মধ্যে ৯টি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে কাজ চলছে।
বস্ত্রকল মালিকদের উদ্দেশে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বৈধ আর অবৈধ যেভাবেই হোক ভারত থেকে আমদানি করা সুতা বস্ত্র খাতের জন্য ক্ষতিকর হলে তা বন্ধ করা হবে। শিগগিরই বস্ত্র আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হবে। এতে বিদ্যমান অনেক সমস্যার সমাধান হবে।
এফবিসিসিআইয়ের প্রথম সহ-সভাপতি ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, নানা প্রতিবন্ধকতায় এ শিল্প এগিয়ে চলছে। সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে গ্যাস সার কারখানায় দেবে না, পোশাক ও টেক্সটাইল খাতে দেবে। আমাদের একটাই উদ্দেশ্য দেশের অর্থনীতিকে বেগবান করা, পাশাপাশি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। রফতানির ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনার জন্য সরকার ও উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, দেশের জিডিপিতে টেক্সটাইল শিল্পের অবদান ১৩ শতাংশ। এ খাত রফতানি আয়ে ৮১ শতাংশ অবদান রেখেছে। তবে এ খাতের মাধ্যমে যে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে তার চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে বিশাল অংশের কর্মসংস্থানের সুযোগ হচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে রফতানি থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার আয় করার যে লক্ষ্যমাত্রা তা সরকারের সহযোগিতা ছাড়া অর্জন কঠিন বলেও মনে করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. ফজলুক হক। স্বাগত বক্তব্যে তিনি বলেন বলেন, টেক্সটাইল শিল্প বাঁচাতে হবে। এ জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ দিতে হবে। এ শিল্প বিদ্যুতের উপর নির্ভরশীল। তাই বিশেষ ব্যবস্থায় এ খাতের জন্য ক্যাপটিভ জেনারেটর অনুমোদন দেয়ার অনুরোধ জনান তিনি। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন চ্যান চাও ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টাইগার লিন। উপস্থিত ছিলেন একই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক জুডি ওয়াং।
বস্ত্রখাতে ক্রমাগতভাবে যে অত্যাধুনিক টেকনোলজির ব্যবহার হচ্ছে তার সঙ্গে দেশিয় উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের পরিচিতি করানোর উদ্দেশ্যে ২০০৪ সাল থেকে ঢাকায় এ ধরণের প্রদর্শনী শুরু হয়। এবার ১৩ম প্রদর্শনীর আসরে এক হাজার ১৬০টি বুথ রয়েছে। ৩৩টি দেশের এক হাজারটি টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস মেশিনারী প্রস্তুতকারক কোম্পানি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্য প্রদর্শন করছেন।