৫২ মফস্বল ডেস্ক।।
কত টাকা দিলে বুকের ধনকে ফিরে পাবেন আহাজারি করে প্রশ্ন করেছিলেন শিশু মো. আবদুল্লাহর মা রিনা বেগম। এ প্রশ্নের মর্মান্তিক জবাব পেয়ে গেছেন তিনি গতকাল মঙ্গলবার।
অপহরণের পাঁচ দিন পর গতকাল আবদুল্লাহর মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। কোনো অঙ্কের অর্থ দিয়েই ছেলেকে ফিরে পাবেন না মা রিনা বেগম। নিজের বড় মামার বাড়ি থেকেই ছেলের লাশ উদ্ধার হওয়ায় স্তম্ভিত তিনিসহ সবাই।কেরানীগঞ্জ উপজেলার রুহিতপুর ইউনিয়নের মুগারচর গ্রামের স্কুলছাত্র মো. আবদুল্লাহ (১১) নিখোঁজ ছিল গত শুক্রবার থেকে। তাকে খুঁজতে থানা-পুলিশ হয়েছে। চলেছে বিস্তর খোঁজখবর করা। একপর্যায়ে মুঠোফোনে তাকে অপহরণের দাবি করে দুই দফায় দুই লাখ টাকা নেয় অপহরণকারীরা। কিন্তু এরপরও শিশুটিকে ফেরত দেয়নি তারা।আবদুল্লাহদের বাড়ির মাত্র ১০০ গজ পশ্চিমের এক বাড়ি থেকে তার লাশ উদ্ধার হয়। বাড়িটি আবদুল্লাহর মায়ের বড় মামা মোতাহার হোসেনের।
অর্থাৎ, তিনি সম্পর্কে শিশুটির নানা। সোমবার রাতেই মোতাহারের ছেলেসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।গতকাল দুপুরে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার পুলিশ ও র্যা বের সদস্যরা মোতাহার হোসেনের দোতলা বাড়ির একটি কক্ষ থেকে প্লাস্টিকের ড্রামে ভরা আবদুল্লাহর গলিত মৃতদেহ উদ্ধার করে। মোতাহার হোসেন পলাতক রয়েছেন। আবদুল্লাহর লাশ উদ্ধারের পর ক্ষুব্ধ স্থানীয় মানুষ জ্বালিয়ে দিয়েছে তাঁর বাড়ি।গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর মাঠে খেলতে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয় পশ্চিম মুগারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র আবদুল্লাহ। আর সে বাড়ি ফেরেনি। ওই দিনই সন্ধ্যায় অপহরণকারীরা একটি মুঠোফোন নম্বর থেকে খুদে বার্তা পাঠিয়ে আবদুল্লাহর পরিবারের কাছে মুক্তিপণ বাবদ সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে। নিখোঁজের ঘটনায় ওই দিন রাতে শিশুটির নানা মারফত আলী কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম আজাদ বলেন, পুলিশের একাধিক দল মুগারচরসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে যাচ্ছিল। গতকাল দুপুরে পুলিশ মোতাহারের বাড়িতে অভিযান চালায়। তখন বাড়ির দোতলার একটি কক্ষে একটি বড় প্লাস্টিকের ড্রাম পাওয়া যায়। সেটা সরাতে গেলে পুলিশের সন্দেহ হয়। ড্রামের মুখটি খোলামাত্রই দুর্গন্ধ বের হয়। পরে দেখা যায়, সেই ড্রামেই রয়েছে আবদুল্লাহর গলিত মৃতদেহ।গতকাল বেলা তিনটার দিকে আবদুল্লাহর লাশ উদ্ধার করা হয়। ছেলের মৃতদেহ উদ্ধারের খবর পেয়ে তার মা রিনা বেগম ও বাবা বাদল মিয়া বারবার অজ্ঞান হয়ে যান। পাগলের মতো প্রলাপ বকতে থাকেন।বাবা বাদল মিয়া বলেন, ‘মোতাহারের টাকার দরকার ছিল, তা আমাদের জানাত! আমি রক্ত বিক্রি করে হলেও টাকা দিতাম। এখন কত টাকা দিলে আমার ছেলেকে জীবিত ফেরত দেবে।এমনভাবে আমার পরানের টুকরারে হত্যা করল, তার কি মায়া লাগে নাই? আমি মোতাহারের পরিবারের লোকজন ও দোষীদের ফাঁসি চাই।
আবদুল্লাহর চাচা মো. কাবিল বলেন, মোতাহার হোসেন পাঁচ বছর আগে সৌদি আরব থেকে ফিরে এসেছেন। তিনি কোনো কাজকর্ম করেন না। কাবিল আরও বলেন, ‘ভাতিজার মুক্তিপণের জন্য দুবার এক লাখ করে দুই লাখ টাকা বিকাশ করেছি।আবদুল্লাহর মৃতদেহ উদ্ধারের খবর পেয়ে মুগারচর এলাকার শত শত মানুষ বাদল মিয়ার বাড়িতে ভিড় জমায়। এ সময় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও শিশুটির আত্মীয়স্বজন দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করে। বেলা তিনটার দিকে পুলিশ ও র্যা বের সদস্যরা আবদুল্লাহর লাশ অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়ার পরই শত শত বিক্ষুব্ধ মানুষ মোতাহার হোসেনের বাড়িতে ভাঙচুর করে এবং একপর্যায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। তারা একই সময়ে মোতাহারের মেজ ভাই মো. আব্বাসের দুটি টিনশেড ঘর ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। তখন পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।এলাকার একজন মা মোতাহারকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘তারও তো ছেলেমেয়ে আছে, তার কি একটুও আবদুল্লাহর জন্য মায়া হয় নাই? আমরা দোষীদের ফাঁসি চাই।’স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে মোতাহার হোসেনের ছেলে মেহেদী হোসেন, প্রতিবেশী সৌদিপ্রবাসী মো. জসিমউদ্দিনের ছেলে মো. আল আমিন ও প্রতিবেশী মো. খোরশেদ আলীকে আটক করে। তবে ‘তদন্তের স্বার্থে’ পুলিশ আটক ব্যক্তিদের পরিচয় জানায়নি। গতকাল রাতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।