৫২ বিনোদন ডেস্ক।।
‘প্রেম’ এবং ‘ভালোবাসা’ শব্দ দু’টো অনেকখানিই আবেগতাড়িত, আচ্ছন্নে মোড়া। ভাবগত অর্থে সময়ের প্রেক্ষিতে ওঠানামাও করে। সেদিক থেকে আপেক্ষিকও বটে। প্রেমের প্রধান বিষয়টাই বিজ্ঞানের পরিভাষায় শরীরগতভাবে জৈব-রাসায়নিক। একজনকে দেখে সময় এবং পরিবেশের প্রেক্ষিতে আরেক শরীরে যে রাসায়নিক ক্রিয়া-বিক্রিয়া ঘটে, তারই প্রভাবে মনের মধ্যে ভাব-ভালোবাসা বোধটা জেগে ওঠে। সোজা অর্থে ভালো লাগে এবং সান্নিধ্য পেতে ইচ্ছে করে। মানুষের জৈব আকাঙ্ক্ষার মূলগত কারণ থেকেই যে ভালোবাসা শব্দটি জেগে উঠেছে— এ তো সহজেই অনুভব করা যায়। ভালোবাসার উত্থান-পতন আছে এবং সময়ের সঙ্গে তার একটা নিবিড় সম্পর্কও বর্তমান। শৈশব পেরিয়ে কৈশোরের উন্মেষ-বিকাশকালে মনের মধ্যে কী যে ঘোর শুরু হয়! ভালো লাগে, সবকিছুই। কারো কারো সঙ্গ যেন নতুন মাত্রা তৈরি করে। সমবয়সীর একটি হাত ধরতে যেমন লাগে, মনের গভীরে বিপরীত লিঙ্গের প্রতিও আগ্রহ-উত্সাহ-উদ্দীপনা শুরু হয়। সমলিঙ্গের আসরে একটি বিরাট অংশই উঠে আসে বিপরীত লিঙ্গের আলোচনায়। এই রকমই তো ব্যাপার— যা আদি এবং প্রাকৃতিক।
কত লজ্জা-জড়তা-ভণিতা— সবমিলে এক অদ্ভুত রোমাঞ্চ! সৃষ্টিকে টিকিয়ে রাখার এই এক অভিনব সৃষ্টি। সমাজ ব্যবস্থার উন্মেষের মধ্যদিয়ে এরই মাঝে কত সব শৃঙ্খলা আর সীমানার প্রাচীর বেঁধে দেবার চেষ্টা-চরিত। বেঁধে রাখা, ইচ্ছেগুলোকে সযতনে চেপে রাখা। শুধু কি তাই, এই বিষয়ক আলাপ-আলোচনাও যে সাধারণ্যে নিষিদ্ধ অনেক সমাজে। গুরুজনেরা সযতনে এড়িয়ে যান। চেপে থাকতে হবে, কোনো খোলামেলা জ্ঞান-জিজ্ঞাসার ব্যবস্থা নেই এ বিষয়ে। সমস্যা তো শুরু হয় সব এ কারণেই। বয়সের টান, বিপরীত লিঙ্গ— মোটামুটি চলনসই একজন সামনে এসে দাঁড়ালেই জেগে উঠতে পারে ভালোবাসা। অথচ জীবনে কত বৈপরীত্য; জনে-মনে, স্বভাবে-চরিত্রে কত অমিল! কিছুই দেখা হয়ে ওঠে না এই এক সহজ-খোলামেলা আলোচনার অভাবে।
নারী-পুরুষের স্বভাবগত মৌলিক পার্থক্য তো আছেই, যে কারণেও সংসার জীবনে গড়মিলও ঘটে যখন তখন। অনেক সময়ে বাড়তে বাড়তে তীব্র সংঘাতে গিয়েও দাঁড়ায়। তাই মনে হয়, সংঘাতের তীব্রতা এড়াতে, মানে সংসারযাত্রাটা চালিয়ে যাবার মানসিকতায় সংসার বন্ধনে আবদ্ধ হতে দু’পক্ষেরই উচিত পারস্পরিক ভাব-ভালোলাগার বিষয়গুলো সম্পর্কে জানা এবং তার সঙ্গে সম্ভাব্য রকমে মানিয়ে নেবার মানসিকতা গড়ে তোলা। বিষয়টি দু’তরফেই প্রযোজ্য। খুব বেশি বৈপরীত্যগুলো— অমিলগুলো যেখানে প্রকট আকার ধারণ করে, সেখানে সংসারযাত্রা চালিয়ে যাওয়াটাই অসম্ভব হয়ে ওঠে। কিন্তু সন্তান যেখানে বর্তমান, সমাধানটা সহজ নয়। নারী-পুরুষের স্বভাবগত সব বৈপরীত্যের পরেও একটা যে বড় ঐক্যের জায়গা—তা হলো, কেয়ার বা নার্সিং। সাধারণভাবে, মেয়েরা নিজেদের বিষয়ে অনেক বেশি মনোযোগই দাবি করে। প্রিয় বন্ধু কিংবা স্বামীর প্রতি তাদের যেমন সজাগ দৃষ্টি, আশা করে তাদের প্রতিও বিপরীত দিকের সমান আগ্রহ এবং মনোযোগ। এ তো স্বাভাবিক, মানবিক চাওয়াই, পুরুষেরও যেমন চাওয়া থাকে তার সবচাইতে প্রিয় মানুষটির কাছ থেকে। তবে ব্যক্তিত্বকে অতিক্রম করে ব্যক্তি স্বামীর উপরে চেপে বসা কিংবা স্বভাবের একেবারে নিজস্ব দিকগুলোর ওপর খবরদারি—নারীর স্বভাবের বৈকল্য হিসেবেও বিবেচনা হতে পারে। যদি এমন হয় তো সেটাকে প্রশ্রয় দেবার তো কারণ নেই। বিপরীত দিক থেকেও তা সমান সত্য।
সমাজ ব্যবস্থার কারণেই পুরুষের স্বভাবটা যে অনেকখানিই বহির্মুখী। একটা সময়ের পরে, হতে পারে যে, সেক্স-বিষয়টার প্রাথমিক একটা ক্রেজ মিটে গেলে তাঁরা আর নারীর প্রতি মনোযোগটা ঠিক ধরে রাখতে পারেন না। কিন্তু স্ত্রী, তিনি হয়তো আশা করেন স্বামী তাঁর সঙ্গে আরো খানিকটা সময় কাটাক, মনোযোগ দিক। স্বামী পারছেন না, কারণ হয়তো তার স্বভাবটাই ঐ। স্ত্রীর বিষয়ে তিনি খুব বেশি যত্নশীল থাকতে পারছেন না, অথচ স্ত্রী আশা করছেন।
পারিবারিক জীবনে প্রায়শ যে সমস্যাগুলো তৈরি হয়, তাতেই পরিষ্কার হয়ে ওঠে মানুষে-মানুষে কত বৈপরীত্য। শুধুই মানুষ হিসেবে যেমন একপ্রকার, লিঙ্গের কারণেও তো। ‘বিবাহ’ প্রথার মাধ্যমে সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশ-প্রকৃতির দুই পরিবারের দু’টি মানুষকে, কিংবা দু’টি পরিবারের মধ্যে যে বন্ধন রচনার চেষ্টা, অনেক ক্ষেত্রেই তা হাস্যকর-ব্যর্থ প্রতীয়মান হয়। মানুষে-মানুষে কত যে ব্যবধান হতে পারে—খুব কাছে না এলে তা উপলব্ধি হয় না। ব্যক্তিত্বের, রুচির, অভ্যাস-স্বভাবের কতসব অসঙ্গতি যে সামনে এসে দাঁড়ায়, তা যারা সে অবস্থার মধ্যে না পড়েন—বুঝতে পারবেন না। পরিবার, সমাজ, অঞ্চল, আঞ্চলিকতা, পারিবারিক শিক্ষা-কৃষ্টি-সংস্কৃতি—এসবই একজন মানুষের ভিতর-বাইরের যে রসায়নটা তৈরি করে, তা যে কতোখানি অভিনব হতে পারে—পারিবারিক সান্নিধ্যের, যোগের সূত্রেই তা প্রকাশিত হয়ে পড়ে। দুইকে মেলানোর চেষ্টা তাই অনেক সময়ই অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে। আবার অন্তরের সদিচ্ছা দিয়ে সমঝোতায় মানিয়ে এবং মেনে নিয়ে সংসারটা টিকেও থাকে। ভবিষ্যত্ প্রজন্ম তথা সন্তানদের বিকাশ-বৃদ্ধি-ভালোর কথা ভেবে টিকিয়ে রাখাটাও তো দরকার। সে অর্থে বিয়ে তো ভীষণই এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
প্রাক্-বিবাহ কাউন্সিলিং, দেখাশোনা, পরিবার-প্রতিবেশ, সমাজ-পরিবারে সহজ ভাব-বিনিময়ের সুযোগ—এসবই অনেক সময়ই যথার্থ ভূমিকা রাখে। আবার সবকিছুর পরও সবটাই একটা দৈব ঘটনার মতো, কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। কী হবে, কার সঙ্গে কার মিলবে—সবটাই এক জটিল দুর্বোধ্যে ভরা। এর তল খুঁজে পাওয়া কোনো মনুষ্যের কর্ম নয়!