প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এস কে সিনহা) নেতৃত্বাধীন নয় সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আপিল বিভাগ আজ (মঙ্গলবার) এই তারিখ পুনর্নির্ধারণ করেন। দুই মন্ত্রীকে আজ সকাল নয়টায় আপিল বিভাগে হাজির হয়ে তাঁদের বক্তব্যের বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু সরকারি কাজে বিদেশে থাকায় আদালতে হাজির হননি কামরুল ইসলাম। তবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক আপিল বিভাগে উপস্থিত ছিলেন।
সকালে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে মোজাম্মেল হকের আইনজীবী রফিক-উল হক ও আবদুল বাসেত মজুমদার শুনানি মুলতবির আরজি জানান। ১৬ মার্চের পর যেকোনো দিন শুনানির তারিখ নির্ধারণ করতে আরজি জানান আবদুল বাসেত মজুমদার। তিনি বলেন, মোজাম্মেল হক তাঁর বক্তব্যের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন।
এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, তারা এখন এ বিষয়ে কিছু শুনবেন না।
শুনানি চলাকালে প্রধান বিচারপতি জানতে চান, খাদ্যমন্ত্রী কোথায়?
তখন তার আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদার বলেন, তিনি দেশের বাইরে, আসবেন ১৬ মার্চ। তাই উনি আদালতে হাজিরা দিতে সময় প্রয়োজন। পরে প্রধান বিচারপতি উভয়মন্ত্রীকে ২০ মার্চ ফের আদালতে হাজির থাকার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ওই দিন দুজনকেই আপিল বিভাগে হাজির হতে হবে। ওই দিন শুনানি হবে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া মীর কাসেম আলীর আপিলের রায়কে কেন্দ্র করে প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের সমালোচনা করে গত ৫ মার্চ রাজধানীতে এক সেমিনারে বক্তব্য দেন সরকারের দুই মন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও আ ক ম মোজাম্মেল হক।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ওই অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধী মীর কাসেম আলীর আপিলের পুনঃশুনানি করার দাবি জানান। তিনি এই মামলার শুনানি নিয়ে প্রধান বিচারপতির বিভিন্ন বক্তব্যের সমালোচনাও করেন। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ দাবি করেন।
প্রধান বিচারপতি এবং বিচার বিভাগ নিয়ে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বিরূপ মন্তব্যে গত ৮ মার্চ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ বিস্ময় প্রকাশ করে। এটি বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ মন্তব্য করে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে নোটিশ জারি করেছে সর্বোচ্চ আদালত। সরকারের দুই মন্ত্রীকে আগামীকাল ১৫ মার্চ সকাল নয়টায় সর্বোচ্চ আদালতে হাজির হয়ে তাদের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে হবে। অন্যদিকে নোটিশের জবাব দিতে হবে আগামী ১৪ মার্চের মধ্যে।
কামরুল ইসলাম ইতোমধ্যে তাঁর বক্তব্যের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। তাঁর আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব গতকাল (সোমবার) সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ-সংক্রান্ত আবেদন জমা দেন।
কামরুল ইসলামের পক্ষে করা আবেদনে বলা হয়েছে, আবেদনকারী প্রথম সুযোগেই আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। তাঁর বক্তব্য ও মন্তব্যের জন্য গভীর দুঃখ ও অনুশোচনা প্রকাশ করেছেন। আবেদনকারী আরও নিশ্চয়তা দিচ্ছেন, ভবিষ্যতে তিনি কখনো এ ধরনের কোনো মন্তব্য করবেন না। প্রধান বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক, সর্বোপরি বিচার বিভাগের ওপর আবেদনকারীর সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা আছে।
আবেদনে আরও বলা হয়, আদালতের নির্দেশ অনুসারে আবেদনকারী অবশ্যই ব্যক্তিগতভাবে আদালতে উপস্থিত হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করবেন এবং তাঁর বক্তব্য হলফনামা আকারে নিজে আদালতে জমা দেবেন। কিন্তু ৭ থেকে ১১ মার্চ তাঁর মালয়েশিয়ায় বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার আঞ্চলিক সম্মেলনে যোগ দেয়া এবং ১২ থেকে ১৫ মার্চ সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাসেবা নেয়ার বিষয়টি আগে থেকে নির্ধারিত ছিল এবং ২ মার্চ এ বিষয়ে সরকারি আদেশ জারি হয়েছে। আবেদনকারী জানেন, নির্ধারিত দিনে ব্যক্তিগতভাবে হাজির থেকে তাঁর আদালতের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। কিন্তু দায়িত্ব ও শারীরিক অসুস্থতার জন্য নির্ধারিত দিনে তিনি আদালতে উপস্থিত থাকতে পারছেন না। ১৬ মার্চ তিনি বিদেশ থেকে ফিরবেন। আদালত যেন ব্যক্তিগত হাজিরার দিনটি পুনর্নির্ধারণ করে আবেদনকারীকে নিজের হাতে লেখা আবেদনের মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনার সুযোগ করে দেন।
অন্যদিকে মোজাম্মেল হকের লিখিত ব্যাখ্যা সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা দিয়েছেন তাঁর আইনজীবী। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম গতকাল বিকেলে সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন। ব্যাখ্যায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী কী লিখেছেন, তা জানা সম্ভব হয়নি। তবে তাঁর আইনজীবী আজ আদালতকে জানিয়েছেন, মোজাম্মেল হকও তাঁর বক্তব্যের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন।