৫২ অর্থনীতি ডেস্ক ।।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮০০ কোটি টাকা চুরির ঘটনায় বিভিন্ন মহলের চাপের মুখে পদত্যাগ করলেন গভর্নর ড. আতিউর রহমান।
আজ (মঙ্গলবার) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এ তথ্য জানিয়েছেন। বেলা পৌনে ১১টার দিকে পদত্যাগ প্রসঙ্গে আলোচনা করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছান তিনি। সেখানেই তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন।
এর আগে সকালে গুলশানের নিজ বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে গভর্নর বলেন, “সোমবার ভারত থেকে দেশে ফেরার পর রাতেই অর্থমন্ত্রীর বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি বলেছেন, আমি চলে গেলে বাংলাদেশ ব্যাংক ভালো চলবে। কিন্তু আমি আমার বিবেক দ্বারা চালিত হই। মনে করি, প্রধানমন্ত্রী আমাকে নিয়োগ দিয়েছেন, তিনি না বললে আমার পদত্যাগ করা উচিত নয়।”
তিনি বলেন, “আমি অপেক্ষা করছি, প্রধানমন্ত্রী কি বলেন। আমি পদত্যাগ করলে যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের ভালো হয়, দেশের ভাল হয়, তাহলে পদত্যাগ করতে আমার দ্বিধা নাই। আমি পদত্যাগপত্র লিখে বসে আছি। প্রধানমন্ত্রী বলার সঙ্গে সঙ্গে আমি পদত্যাগ করব।”
রিজার্ভের টাকা চুরির বিষয়টি অর্থমন্ত্রীকে না জানানোর যুক্তি তুলে ধরে গভর্নর বলেন, অর্থমন্ত্রীকে বিষয়টি জানাইনি, কারণ আমি চেষ্টা করছিলাম- টাকাটা ফেরত আনার জন্য। অর্থমন্ত্রীকে জানালে যে টাকাটা ফেরত এসেছে সেটাও ফেরত পেতাম না। কথা বলার একপর্যায়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন আতিউর রহমান।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, “যা কিছু করেছি সবই দেশের স্বার্থে করেছি। ২৮ মিলিয়ন ডলার আমার সন্তানের মতো। প্রতিটি ডলারই তিল তিল করে সঞ্চয় করেছি। একটি ডলারও যাতে নষ্ট না হয় সে চেষ্টা করেছি। কিন্তু এটি ছিল একটা সাইবার অ্যাটাক। কোথা থেকে হ্যাক হয়েছে সে বিষয়ে আমরা কেউই কিছুই জানি না।”
তিনি বলেন, “এই ঘটনা জানার আমরা কিছুটা গোপনীয়তা অবলম্বন করেছি। আমাদের ইন্টিলিজেন্সকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করেছি। র্যাবকেও নিয়ে তদন্ত করেছি। তাদের বলেছি- আমাদের ব্যাংকের যদি কেউ জড়িত থাকে তাহলে যে কোন সময় গ্রেফতার করতে পারেন। পরে অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছি।”
পুরো টাকাই পাওয়ার আশ্বাস দিয়ে গভর্নর বলেন, “টাকা চুরির পর ফিলিপিনের গভর্নরের সঙ্গে কথা বলেছি। চুরি হওয়ার টাকার একটি অংশ ফেরত পেয়েছি। আজ সকালে ফিলিপিন থেকে সংবাদ এসেছে- বাকি টাকাও ফেরত পাওয়া যাবে।”
ভারত সফরে যাওয়ার বিষয়ে গভর্নর বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে জানিয়েই আমি ভারত সফরে গিয়েছিলাম এবং সেখানে চুরি যাওয়া অর্থ কিভাবে ফেরত পাওয়া যাবে তা নিয়ে আলোচনা করেছি।”
এদিকে, রিজার্ভের অর্থ চুরির বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আজ বেলা আড়াইটার দিকে সংবাদ সম্মেলন করবেন। এর আগে গতকাল সোমবার দুপুরে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে একটা পরিবর্তন হবে। অর্থমন্ত্রী কথা বলবেন, বিবৃতি দেবেন, গভর্নর আসবেন দেখা করতে—এসব খবরে গতকাল দিনভর সচিবালয়ে উৎসুক ছিলেন সাংবাদিকেরা। গভর্নর আতিউর রহমানকে নিয়ে দিনভর ছিল নানা গুঞ্জন। সরকারি দলেও ছিল সমালোচনা।
আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরি হয় ৫ ফেব্রুয়ারি। বাংলাদেশ ব্যাংক গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সাইবার আক্রমণে ৩৫টি ভুয়া পরিশোধ নির্দেশের মাধ্যমে ৯৫ কোটি ১০ মার্কিন ডলার বা প্রায় ৭ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা স্থানান্তরের প্রস্তাব পাঠানো হয়। তার মধ্যে ৩০টি নির্দেশ আটকানো সম্ভব হয়। তাতে ৮৫ কোটি ডলার বেহাত হওয়া প্রতিহত করা গেছে। তবে পাঁচটি পরিশোধ নির্দেশের বিপরীতে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার বা প্রায় ৮০৮ কোটি টাকা ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কায় চলে যায়। তার মধ্যে শ্রীলঙ্কা থেকে দুই কোটি ডলার উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে। ফিলিপাইনে যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার বা প্রায় সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।