৫২ রাজনীতি ডেস্ক।।
আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর সমবেদনা জানানোকে কুমিরের কান্নার সঙ্গে তুলনা করেছেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রবিবার গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে রিজভী এ মন্তব্য করেন। দলের সহ-দফতর সম্পাদক মো. আব্দুল লতিফ জনি বিবৃতিটি পাঠিয়েছেন।
যাত্রাবাড়ীতে বাসে দুর্বৃত্তদের পেট্রোলবোমায় যাত্রী দগ্ধ হওয়ার ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এ বিবৃতি দেন তিনি।
বিবৃতিতে রিজভী বলেন, কোকোর মৃত্যুতে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ করতে আসাটাকে আমরা ইতিবাচক অর্থেই গ্রহণ করেছিলাম। রাজনীতির বাইরে সামাজিক দায়িত্ববোধের তাগিদেই প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়াকে সমবেদনা জানাতে এসেছেন বলে ধরে নিয়েছিলাম। কিন্তু বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে মামলার ঘটনায় এটা সুস্পষ্ট যে, গতকাল (শনিবার) কোকোর মৃত্যু সংবাদে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর সহানুভূতি জানাতে আসাটা ছিল নিছকই ছলনা, একটি প্রহসনের মহড়ামাত্র। কোকোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর সমবেদনা জানানোটা যেন কুমিরের কান্না।
তিনি বলেন, পুত্রশোকে কাতর দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করে বর্তমান জবরদখলকারী ভোটারবিহীন সরকার হিংস্র অমানবিকতার আরেকটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
বিবৃতিতে রিজভী বলেন, কতখানি নিষ্ঠুর ও বিবেকশূন্য হলে একটি সরকার এই জঘন্য অপকর্মটি করতে পারে তা দুনিয়াতে মনে হয় নজিরবিহীন। এই ভোটারবিহীন সরকার মনুষ্যত্বের সকল বৈশিষ্ট্য জলাঞ্জলি দিয়েছে।
রিজভী বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকার ও তাদের আন্দোলনের ফসল ওয়ান-ইলেভেনের সরকারের মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনে প্রায় সাড়ে সাত বছর ধরে অসুস্থতায় ভুগছিলেন আরাফাত রহমান কোকো। মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দিনের সরকার খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের দিনই কোকোকে আটক করে। আটকের পর তার ওপর চালানো হয় অমানুষিক অত্যাচার। এই অত্যাচারেই গুরুতর হৃদরোগে আক্রান্ত হন কোকো।
তিনি বিবৃতিতে বলেন, এরপর আওয়ামী মহাজোট সরকার একের পর এক মিথ্যা মামলা করতে থাকে কোকোর বিরুদ্ধে। মায়ের কাছ থেকে সন্তান ও সন্তানের পরিবারকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়। মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের ফলে অসুস্থতায় ভুগতে ভুগতে শনিবার কোকো মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পরিবারকে ধারাবাহিকভাবে ধ্বংস করার একটিমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে— জিয়ার বহুদলীয় গণতন্ত্রকে উচ্ছেদ করে এক ব্যক্তির একক রাজত্ব চালিয়ে যাওয়ার পথে বাধা দূর করা।
রিজভী আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার রাজনৈতিক বিরোধীদের গভীর শোকের সময়ও তাদের বিরুদ্ধে নিজের অন্তরের বিদ্বেষ-বিষ দূরীভূত করতে পারেননি। বেগম জিয়াকে কারাগারে বন্দী করার নীলনকশা তারা অনেক দিন ধরেই এঁটে আসছে। বেগম জিয়াকে আটক করার জন্যই একের পর এক পেট্রোলবোমা মেরে নাশকতার ঘটনা ঘটানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বার বার বলা হয়েছে যে, সরকারি এজেন্টরাই এই নাশকতাগুলো করছে বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে। সেই উদ্দেশ্যটা হচ্ছে— গণবিরোধী ভোটারবিহীন সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভকে ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া। চলমান আন্দোলনের বিরুদ্ধে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরী করা। আর সে জন্যই বেগম জিয়াসহ নেতৃবৃন্দের নামে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।
রিজভী বলেন, বেগম জিয়াকে নিজ বাড়ি থেকে উচ্ছেদ, তাকে এবং তার ছেলেদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা, ছেলেদেরকে মায়ের কাছ থেকে দূরে রাখতে বাধ্য করাসহ এমন কোনো উৎপীড়নের পন্থা নেই যা এই অবৈধ সরকার অবলম্বন করেনি। কিন্তু তার পরও জাতীয়তাবাদী শক্তিকে দমিয়ে রাখতে পারেনি।
বিবৃতিতে রুহুল কবির রিজভী দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেন, এই অবৈধ অপশক্তির কোনো অশুভ পরিকল্পনাই ফলপ্রসূ হবে না। জনগণ এখন রাস্তায় নেমে এসেছে। গণতন্ত্র পুনঃরুদ্ধারের আন্দোলন গন্তব্যে না পৌঁছান পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে জনগণের সম্মিলিত শক্তিতে অবরোধ-হরতাল অব্যাহতভাবে চলতে থাকবে।
বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রিজভী আহমেদ বিবৃতিতে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, অবিলম্বে বিএনপি চেয়ারপারসনসহ সকল নেতাদের বিরুদ্ধে করা ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, অন্যথায় এই অবৈধ সরকারকে ভয়াবহ পরিণতির জন্য আর বেশী দিন অপেক্ষা করতে হবে না।
তিনি যাত্রাবাড়ীতে দুষ্কৃতিকারীদের ছোড়া পেট্রোলবোমা হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে প্রকৃত দোষীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। রিজভী পেট্রোলবোমার আঘাতে দগ্ধ মানুষদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
– See more at: http://www.thereport24.com/article/83713/index.html#sthash.EjuPAIlf.dpuf