৫২ জাতীয় ডেস্ক।।
উদয়ের পথে শুনি কার বাণী ভয় নাই ওরে, ভয় নাই। নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।
আজ ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। বাঙালির দীর্ঘ স্বাধিকার আন্দোলনের চূড়ান্ত লড়াইয়ের সূচনার কাল। প্রতিবছর মহান স্বাধীনতা দিবস জাতির জীবনে প্রেরণায় উজ্জীবিত হওয়ার নতুন বার্তা নিয়ে আসে। স্বাধীনতা দিবস তাই বাংলাদেশের মানুষের কাছে মুক্তির প্রতিজ্ঞায় উদ্দীপ্ত হওয়ার ইতিহাস। ১৯৭১ সালের এই দিনে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন ও তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে ৪৬তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদ্যাপন করবে জাতি। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন।
২৫ মার্চের মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া হত্যাযজ্ঞের ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বাঙালি এই দিন থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও দেশ স্বাধীন করার শপথ গ্রহণ করে। এই দিনেই প্রতিটি বাঙালির মনে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের বীজ রোপিত হয়। স্বাধীন বাংলার অবরুদ্ধ রাজধানী ঢাকা ছাড়া সমগ্র বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা দিনে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলিত হয়।১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পাক হানাদার বাহিনী বিভীষিকাময় অবস্থার সৃষ্টি করে মেশিনগান মর্টারের গোলায়। এদিনের প্রথম প্রহরে পাক হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র নিরপরাধ বাঙালির বিরুদ্ধে অঘোষিত যুদ্ধ ঘোষণা করলে মুক্তি সংগ্রামের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন : ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনী অতর্কিতে পিলখানায় ইপিআর ঘাঁটি, রাজারবাগ পুলিশ লাইন আক্রমণ করেছে এবং শহরের লোকদের হত্যা করেছে। ঢাকা, চট্টগ্রামের রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ চলছে।
আমি বিশ্বের জাতিসমূহের কাছে সাহায্যের আবেদন করছি। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা বীরত্বের সঙ্গে মাতৃভূমি মুক্ত করার জন্য শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করছে। সর্বশক্তিমান আল্লাহর নামে আপনাদের কাছে আমার আবেদন ও আদেশ দেশকে স্বাধীন করার জন্য শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যান। কোনো আপোস নাই, জয় আমাদের হবেই। আমাদের পবিত্র মাতৃভূমি থেকে শেষ শত্রুকে বিতাড়িত করুন। সকল দেশপ্রেমিক ও স্বাধীনতাপ্রিয় লোকদের এ সংবাদ পৌঁছে দিন। আল্লাহ আপনাদের মঙ্গল করুন। জয় বাংলা।’বন্দর নগরী চট্টগ্রামকে সশস্ত্র যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করে দেশের সর্বত্র চলে সশস্ত্র প্রতিরোধ। বঙ্গবন্ধু ঘোষিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হ্যান্ডবিল আকারে ইংরেজি ও বাংলায় ছাপিয়ে চট্টগ্রামে বিলি করা হয়। আওয়ামী লীগের শ্রম সম্পাদক জহুর আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা চট্টগ্রামের ইপিআর সদর দফতর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ওয়্যারলেস মারফত প্রেরণের ব্যবস্থা করেন। চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান দুপুর ২টা ১০ মিনিটে এবং ২টা ৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম বেতার থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র’ নামে এক নতুন অধ্যায় শুরু করেন তত্কালীন পাকিস্তান বেতারের তিনজন পথপ্রদর্শক শব্দসৈনিক বেলাল মোহাম্মদ, আবদুল্লাহ্ আল ফারুক এবং প্রয়াত আবুল কাশেম সন্দ্বীপ। ২৬ মার্চ ১৯৭১ সন্ধ্যাবেলায় কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে ৮৭০ কিলোওয়াট ট্রান্সমিটার থেকে এই বেতারকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণ ও ২৫শে মার্চ ১৯৭১’-এ পাঠানো স্বাধীনতার ঘোষণাভিত্তিক তারবার্তার আদলে স্বাধীনতা এবং স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্পর্কিত অনুষ্ঠান ২৬শে মার্চ ১৯৭১ কালুরঘাট থেকে সম্প্রচার করেন এম এ হান্নান, সুলতানুল আলম, বেলাল মোহাম্মদ, আবদুল্লাহ্ আল ফারুক, আবুল কাশেম সন্দ্বীপ, কবি আবদুস সালাম এবং মাহমুদ হাসান। এ সময় তারা বারবার বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়া বার্তা পাঠ করেন।
এদিন ঢাকা সেনানিবাসের অভ্যন্তরের আদমজী কলেজ থেকে বন্দী অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ফ্ল্যাগ স্টাফ হাউজে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে সারাদিন আটক রেখে সন্ধ্যায় অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।পাকহানাদার বাহিনী ঢাকায় দিনরাত কারফিউ দিয়ে দলে দলে রাস্তায় নেমে ভবন, বস্তি ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের বাসভবনের ওপর ভারি মেশিনগান ও কামানের গোলা নিক্ষেপ করতে থাকে। এলাকার পর এলাকা আগুন লাগিয়ে ভয়ার্ত নরনারী ও শিশুকে অগ্নিদগ্ধ করে এবং গুলি করে হত্যা করে। বিদেশি সাংবাদিকদের হোটেল কন্টিনেন্টালে আটক রাখা হয়।অবাঙালি নাগরিকদের সহযোগিতায় পাক সেনারা দুপুরে ঢাকা আক্রমণ করে এবং মধ্যরাত পর্যন্ত ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এসময় পাকহানাদার বাহিনী দৈনিক ইত্তেফাক, সংবাদ, দি পিপল, বাংলার বাণী অফিসে এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ট্যাঙ্কের গোলায় ধ্বংস করে দেয়।
বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একাধিক গণকবর খুঁড়ে সেখানে শত শত লাশ মাটি চাপা দিয়ে তার ওপর বুলডোজার চালায়। নগরীর বিভিন্ন স্থানে সারারাত ধরে হাজার হাজার লাশ মাটি চাপা দেয়া হয়। পুরানো ঢাকায় নিহতদের লাশ বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেয়া হয়।এদিন সকালে পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো কড়া সামরিক প্রহরায় ঢাকা ত্যাগ করেন। করাচী বিমানবন্দরে পৌঁছে তিনি ঢাকায় ২৫ মার্চের সেনাবাহিনীর অপারেশনের প্রশংসা করে বলেন, আল্লাহকে অশেষ ধন্যবাদ। সেনাবাহিনী পাকিস্তানকে রক্ষা করেছে।জাতীয় ও সরকারি কর্মসূচি মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালন উপলক্ষে এবার জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আজ ভোরে সশস্ত্র বাহিনীর তত্ত্বাবধানে রাজধানীতে একত্রিশ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এসময় সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সুসজ্জিত দল আন্তঃবাহিনী গার্ড অব অনার প্রদান করবে।
এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধারা, বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনীতিকগণ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সাধারণ নাগরিকগণ জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এছাড়া সকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শিশু-কিশোর সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। দিবসের তাত্পর্য তুলে ধরে সংবাদপত্রসমূহে বিশেষ নিবন্ধ ও ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে এবং সরকারি ও বেসরকারি বেতার ও টিভি চ্যানেলে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচারিত হয়ে থাকে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। এদিকে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর বাদক দল রাজধানীর ক্রিসেন্ট লেক, ফার্মগেটে পার্ক এলাকা মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে বেলা তিনটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত বাদ্য পরিবেশন করবে।
জাতির শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ স্মারক ডাক টিকেট প্রকাশ করবে। হাসপাতাল, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রমসহ এ ধরনের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং রাতে আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করবে। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটির দিন। এদিন রাজধানীর সড়ক ও সড়কদ্বীপ জাতীয় পতাকাসহ নানা রঙের পতাকা দিয়ে সাজানো হবে।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি
আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- আজ শনিবার ভোরে বঙ্গবন্ধু ভবন এবং দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৬ টায় সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে এবং সকাল ১১টায় টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ। আগামীকাল রবিবার সাড়ে তিনটায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করবেন। মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ ছাড়াও জাতীয় পার্টি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, গণফোরামসহ বিভিন্ন যুব ও ছাত্র সংগঠন মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর বাণী
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বাণী দিয়েছেন। এছাড়া বাণী দিয়েছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার এডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, জাতীয় পার্টির (এ) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন। এই অর্জনকে অর্থপূর্ণ করতে সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে হবে, স্বাধীনতার চেতনাকে ধারণ করতে হবে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে পৌঁছে দিতে হবে। তিনি বলেন, সপরিবারে জাতির পিতা হত্যার বিচারের রায় কার্যকর করা হয়েছে। একাত্তরের মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করা হচ্ছে। বুদ্ধিজীবী হত্যাকারীদের বিচারের রায়ও কার্যকর হবে।রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, মহান স্বাধীনতা দিবস আমাদের জাতীয় জীবনে এক অনন্য গৌরবময় দিন। ঐতিহাসিক এ দিনে আমি পরম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। মহান স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য ছিল একটি সুখী ও সমৃদ্ধ দেশ গড়া। সে লক্ষ্য অর্জনে বর্তমান সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বেগম খালেদা জিয়া বলেন, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস আমাদের জীবনে এক গৌরবোজ্জ্বল সোনালি দিন। এদেশের মানুষ শোষণ, বঞ্চনাহীন, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। লাখো শহীদের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করার অপতত্পরতায় লিপ্ত দেশি-বিদেশি চিহ্নিত মহল।
মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জেপি’র বিবৃতি ও কর্মসূচি
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে জাতীয় পার্টি-জেপি’র চেয়ারম্যান এবং পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এবং মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এর মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির জীবনে অবসান ঘটে পরাধীনতার গ্লানি। ১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্র কাননে বাঙালি জাতির যে স্বাধীনতা সূর্য অস্ত গিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে তা আবার উদিত হয়ে বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে এক নতুন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে ।
প্রতিষ্ঠিত হয় বাঙালির নিজস্ব আবাস ভূমি। আজকের এই দিনে আমরা তাই গভীর ও বিনম্র শ্রদ্ধা ভালোবাসায় স্মরণ করি সেই সব অকুতোভয় বীর সন্তানদের; যাদের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করতে সমর্থ হয়েছিল। একই সঙ্গে স্মরণ করছি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান; যারা লড়াই করে দেশকে হানাদারমুক্ত করেছিল। আমরা স্মরণ করি নির্যাতিত মা বোনদের আর দেশবাসীর অমূল্য অবদানকে।স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও আমরা ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, গ্লানি থেকে মুক্তি পাইনি। এবারের স্বাধীনতা দিবসে তাই আমাদের শপথ হওয়া উচিত্ ক্ষুধা ও দারিদ্র্য, নিরক্ষর মুক্ত দেশ গড়ার। আমরা দেশবাসী জনগণকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সেই চেতনাকে আবারও ধারণ করে ঐক্যবদ্ধভাবে এই গ্লানি হতে মুক্ত হওয়ার সংগ্রাম গড়ে তোলার আহ্বান জানাই।
এবারের স্বাধীনতা দিবস আসছে আমাদের মাঝে এমনি এক সময় যখন বাংলাদেশের জাতীয় প্রবৃদ্ধি ও অর্থনীতির চাকা সচল রয়েছে এবং তা সারা বিশ্বের প্রশংসা কুড়াচ্ছে। শিক্ষা ও ছাত্রসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করছে স্বাধীনতার ৪৬তম বার্ষিকীর এই মুহূর্তে আজ প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমগ্র জাতির ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং দেশের সাংবিধানিক গণতন্ত্রের ধারা সুসংহত করা, দারিদ্র্য নিরক্ষরতা ও পশ্চাত্মুখী চিন্তাকে দূরীভূত করা।যে দেশের জনগণ ৩০ লক্ষ মানুষের প্রাণ ও কোটি জনতার ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করে, সে জাতি এক বীরের জাতি। ৭১ আমাদেরকে শিখিয়েছে দেশ, জাতি ও মানুষের কল্যাণের জন্য দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ত্যাগ স্বীকার করা। এবারের স্বাধীনতা দিবসে আমরা তাই নতুন করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের জন্য শপথ গ্রহণ করি। ন্যায় ও সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য শপথ গ্রহণ করবো। সত্য ও ন্যায়ের এই সংগ্রামে আমাদের জয় হবেই।
জেপির দুই দিন ব্যাপী কর্মসূচিঃ
আজ ২৬ মার্চ সকাল সাড়ে ছয়টায় জাতীয় পার্টি-জেপি’র সকল কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৮টায় সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও স্বাধীনতার বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। বাদ জোহর শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া। আগামীকাল রবিবার বিকাল ৪টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা। আলোচনা সভায় নেতৃবৃন্দকে উপস্থিত থাকতে দলের মহাসচিব অনুরোধ জানিয়েছেন।