৫২ রাজনীতি ডেস্ক।।
নতুন নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য এখন কাজ করছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করা হচ্ছে। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিভিন্ন জেলায় জনসভা করে নেতাকর্মী ও জনগণকে রাজপথের আন্দোলনে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করছেন। সাবেক ছাত্রনেতাদের নিয়ে সর্বদলীয় ছাত্র কনভেনশন করা হয়েছে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দলের নির্ভরযোগ্য তিন নেতাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। নানা মাত্রার তৎপরতা চালিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে বিএনপি।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক পরিসরে এখন কাজ করছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. ওসমান ফারুক এবং বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারপারসনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা শমসের মবিন চৌধুরী। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডা, জাপান, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বেশকিছু দেশের কূটনৈতিক ও দাতা সংস্থার সঙ্গে তারা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
বিগত সময়ে আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা রাখায় খালেদা জিয়ার আস্থায় রয়েছেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বেশকিছু দেশে তিনি কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়েছেন। লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাত্ করে তাকে সব বিষয় অবহিত করেন। কিছুদিনের মধ্যে তিনি আবারো কূটনৈতিক যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য বিদেশে যাবেন।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেক রাজনৈতিক দল রয়েছে। তেমনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনেক রাজনৈতিক দল আছে। তাদের সঙ্গে আমাদের সংযোগ রাখা বিশেষ প্রয়োজন। যাতে করে আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তাদের সহযোগিতা সহায়ক হয়ে ওঠে। রাজনীতি, অর্থনীতি ও সামাজিক ক্ষেত্রে একটি দেশের অভ্যন্তরে যে সম্পর্ক রয়েছে, সেখানে উন্নয়ন ঘটাতে গেলে পারস্পরিক সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে। সে লক্ষ্যে আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সংযোগ বাড়াচ্ছি।’
সাবেক এ বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বে মাত্র দুই থেকে তিনটি দেশের সরকারের সঙ্গে বর্তমান সরকারের সম্পর্ক আছে। অন্যান্য দেশের সঙ্গে এ দেশের কূটনৈতিক অবস্থা শোচনীয়। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডা, জাপান, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাংলাদেশস্থ কূটনীতিক ও দাতা সংস্থারা বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে পুনরায় একটি মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আমরা বারবারই সরকারকে বলছি, পুনরায় একটি মধ্যবর্তী নির্বাচন দেয়ার জন্য।’
জানা গেছে, সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি বিদেশী কূটনীতিকদের মাধ্যমে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে দাবি আদায়ের বিষয়ে বেশি জোর দিচ্ছে বিএনপি। আর এ লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. ওসমান ফারুক। অধিকাংশ সময়ই তিনি দেশের বাইরে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে কাজ করছেন।
জানতে চাইলে ওসমান ফারুক বলেন, ‘বিএনপির রাজনীতি তো শুধু দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, ‘আন্তর্জাতিকভাবে সব দেশের সঙ্গেই বিএনপির কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া এ বিষয়ে আমাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আমরা সে লক্ষ্যে কাজও করছি। শুধু একটি দেশ ছাড়া সব দেশের কূটনীতিকরা বারবারই বলছেন, আলোচনার মাধ্যমে সব দলের অংশগ্রহণে বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া জরুরি।’
সাবেক এ শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের ওপর জনগণের আর কোনো আস্থা নেই। তার পরও শুধু একটি মাত্র দেশের ভরসায় গায়ের জোরে সরকার ক্ষমতা আঁকড়ে রয়েছে। এভাবে বেশি দিন ক্ষমতায় থাকা যায় না, দেশের মানুষ অতীতেও সেটা হতে দেয়নি।
২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যায়ে পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন শমসের মবিন চৌধুরী। শ্রীলংকা, জার্মানি, ভিয়েতনাম, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবেও ছিলেন তিনি। সবদিক বিবেচনায় তাকে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করতে নির্দেশ দিয়েছেন খালেদা জিয়া। এ লক্ষ্যে বিদেশী দাতা সংস্থার প্রতিনিধি ও কূটনীতিকদের সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ কয়েকজন নেতাকে নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন হোটেলে কয়েক দফায় আলোচনা হয়েছে। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও পুনরায় একটি মধ্যবর্তী নির্বাচন-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এছাড়া গত মাসে রাজধানীর একটি হোটেলে ফ্রান্স, তুরস্ক, সুইজারল্যান্ড, চীন ও সিঙ্গাপুরের হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি নেতারা। সেখানে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, নেপাল, জাপান, ভিয়েতনাম, স্পেন, সুইডেন, কানাডা, সৌদি আরব, দক্ষিণ কোরিয়া, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, বাংলাদেশে এখন গণতন্ত্র বিলুপ্ত। তাই দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ সুদৃঢ় করতে কাজ করছে বিএনপি।-বণিক বার্তা।