৫২ মফস্বল ডেস্ক।।
গত ২২ জানুয়ারি দাউদকান্দি উপজেলায় র্যাবের সাথে তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রদলের পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক সোলেমান উদ্দিন জিসানের (৩৫) লাশ গতকাল সকালে কুমিল্লার টিক্কারচর আঞ্জুমান মফিদুল ইসলা,ের গোরস্থান থেকে উত্তোলন করা হয়। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শামীম হোসেন, আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের সভাপতি খোরশেতদ আলম, দাউদকান্দি থানার উপ-পরিদর্শক (তদন্ত) এনামুল হক ও জিসানের মা ফাতেমার বেগমের উপস্তিতিতে এ লাশ উত্তোলন করা হয়।
এর আগে জিসানের বেওয়ারিশ দাফনের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে গত ২৫ জানুয়ারি তার মা কুমিল্লা আদালতে লাশ উত্তোরন ও ফেরতের বিষয়ে আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করে। জানা যায়, গত ২২ জানুয়ারি রাত ২ টার সময় জিসান মোটর সাইকেল যোগে লক্ষ্মীপুর যাওয়ার পথে দাউদকান্দি উপজেলার পুটিয়া বাইপাস সড়কের দৌলতপুরে র্যাব—১১ এর সদস্য তাকে থামার জন্য সংকেত দেয়। এসময় জিসান র্যাবকে রক্ষ্র করে গুলি ছুড়লে র্যাব ও পাল্টা গুলি ছোঁড়ে।
এ সমসয় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই জিসান নিহত হয়। পরবর্তীতে খবর পেয়ে দাউদকান্দি থানা পুলিশ জিসানের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসার পর ময়নাকদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে এবং ঘটনার ১ দিন শেস হয়ে গেলে ও জিসানের আত্মীয় স্বজনের খোঁজ খবর না পেয়ে কুমিল্লার টিক্কারচর আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করা হলে তার লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়। তবে জিসানের পারিবারিক সূত্র জানায়, ঐদিন জিসান তারমায়ের সাথে ঢাকায় দেখা করে লক্ষ্মীপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলে র্যাব-১১ সদস্যরা তাকে তুলে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। নিহত জিসানের মা ফাতেমা বেগমের অভিযোগ, জিসান সৎ ও আদর্শবান ছাত্রদল নেতা ছিল।
বিভিন্ন সময় সে এলাকায় মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্দে প্রতিবাদ করায় সন্ত্রাসীদের রোষানলে পাড় এবং আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে ৪৪ টি মামলা করা হয়। জিসানকে আটক করতে এসে পুলিশ জিসানকে না পেয়ে সরকার আমাকে আটকে করে। ৭ দিন জেল হাজতে রাখার পর পরবর্তীতে আমাকে ছেড়ে দেয়া হয়। বেশ কয়েকবার ভাংচুর করা হয় আমাদের বাড়ি-ঘর। যার ফলে গ্রামে টিকতে না পেরে আমরা জিসানের চতুর্থ শ্রেনিতে পড়–য়া কন্যা সন্তান ফারিয়া আক্তার মেহেরীন ও জিসানের স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসি। নাম না প্রকাশ করার শর্তে জিসানের এক আত্মীয় জানায়, একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে জিসান খুবই জনপ্রিয় ছিল। জেলা রাজনীতিতে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকায় এলাকার সাধারণ মানুস ধারণা করে আসছিল জিসান লক্ষ্মীপুর সদরের কোন এক সময় বিএনপিৎর সদস্য হত।
জিসানের মা আরো জানায়, জিসানের নিহতের ঘটনা শুনে পারিবারিক ভাবে এবং জিসানের পূর্ব ইচ্ছানুযায়ী মসজিদের পাশে তার লাশ দাফনের জন্য একিট কবর খোঁড়া হয়। আমাদের খবর আশ্চার্য দেয়া হয় লাশ লক্ষীপুরে আনা হবে। কিন্তু বাকতালায় ভাবে প্রশাসন এসে কবরটিতে আবার মাটি ফেলে দেয়। পরদিন খবর আসে আসে জিসানের লাশ কুমিল্লার টিক্কারচরে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে। এ বিষযে জানতে চাইলে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের সভাপতি খোরশেত আলম জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনুমতি পেয়ে আমরা জিসানের লাশ দাফনের বিসয়ে সিদ্ধান্ত নেই।
আবার প্রশাসনের অনুমতি পেয়ে আমরা লাশ ফেরত দিচ্ছি। দাউদকান্দি থানার উপ-পরিদর্শক (তদন্ত) এনামুল হক জানান, জিসান নিহত হওয়ার পর লাশ থানায় হস্তান্তর করা হয়। পরিবার থেকে কোন খোঁজ না আসায় লাশ ময়না তদন্তে শেষে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে। আজ (গতকাল) বিজ্ঞ ম্যাজিষ্ট্রেটের উপস্থিতিতে পরিবারকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও আদর্শ সদর উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট শামীম হোসেন জানান, কোন নিহত ব্যাক্তির পরিচয় নিহতের একদিনের মদ্যে পাওা না গেলে লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়। জিসানের পরিবারের ইচ্ছাতে তার লাশ বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। নিহত জিসান লক্ষ্মীপুর সদরের পশ্চিম লতিফপুর গ্রামের সাবেক পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) কর্মকর্তা মৃত আবু বক্করের ছেলে।