মুসলমান ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে মতপার্থক্য কারণ আছে। ইসলাম অনুসরণকারী কিছু মানুষ আছে শরিয়ত পন্থি কিছু মানুষ আছে মারেফত পন্থি। যদিও এই দুটি পথই ইসলামের জন্য সঠিক। কোরআনে মধ্যেই আল্লাহ উল্লেখ করেছেন কিছু আয়াত আছে জাহেরী কিছু আছে বাতেনী। জাহেরী অর্থাৎ দৃশ্যমান এবং বাতেনী অর্থাৎ গুপ্ত। অধিকাংশ লোক সকল সহজেই বুঝতে পারেন। জাহেরী যেটা দেখা যায় সেটা হচ্ছে শরিয়ত আর বাতেনী গুপ্ত সেটা হচ্ছে মারেফত। কিন্তু যেহেতু গুপ্ত ব্যপ্ত উভয়ই আল্লাহর রাছুল সা. এরই শিক্ষা একটার সাথে অন্যটার বিভেদ হওয়ার কোন কারণ নাই। শরিয়ত যেমন কোরআনের জ্ঞান ঠিক তেমনি মারেফতও কোরআনেরই জ্ঞান। যারা শরিয়ত এবং মারেফতের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি করে তারা অজ্ঞতা বশতই করে। প্রসিদ্ধ হাদিসের কিতাব ‘মুয়াত্তা মালিক’ এর প্রনেতা হযরত ইমাম মালেক রাহ. শরিয়ত এবং মারেফত জ্ঞান সম্পর্কে বলেছেন “যে ব্যক্তি ইলমে শরিয়তের জ্ঞান হাসিল করলো কিন্তু মারেফত পরিত্যাজ্ঞ করলো সে ফাসেক। আর যে ব্যক্তি ইলমে মারেফতের জ্ঞান হাসিল করলো কিন্তু শরিয়ত মানলো না সে জিন্দিক(কাফের)। উভয় জ্ঞানে জ্ঞানীরাই হচ্ছে প্রকৃত আলেম”। একটা কথা মনে রাখা দরকার কোরআন অনুযায়ী ফাসেক এবং কাফের উভয়ই আল্লাহর কাছে অপছন্দনীয়।
ভারত উপমহাদেশে আল্লাহ কোন নবী প্রেরণ করেন নাই। রাছুল সা. এর প্রতিষ্ঠিত ইসলাম ওলি আউলিয়া পির ফকিরগনদের মাধ্যেই বিস্তার লাভ করেছে। এ কথা কেউই অস্বীকার করার কোন উপায় নাই। বর্তমানে সকল মুসলিম প্রধান দেশেই শরিয়তের শিক্ষার জন্য নানান রকম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা হওয়াতে সমাজে স্বীকৃতি আছে শরিয়তের জ্ঞানীদের। এই বলে কি ওলি আউলিয়া পির ফকিরদের ইসলাম প্রচার অবদানের কথা ভুলে গেলে চলবে! এদেশে ইসলাম যাদের মাধ্যমে বিস্তার লাভ করেছে তাদের যদি আমরা ভুলে যাই অস্বীকার করি সেটা তো অন্যায় হবে। মানুষ যতই অকৃতজ্ঞ হউক আল্লাহ কিন্তু তার ওলিদের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে আস্বস্ত করেছেন। সূরা ইউনুস এর ৬২ নং আয়াত “আলা ইন্না আওলিয়া- আল্লা-হি লা খওফুন আলাইহিম্ অলা-হুম ইয়াহযানূন”। অর্থ: ‘সাবধান! নিশ্চয়ই আল্লাহর বন্ধুদের কোন ভয় নেই আর তারা দু:খিতও হবে না’। আল্লাহ তাঁর ওলিদের সম্পর্কে আরো আয়াতে বলেছেন সূরা বাকারার ২:১৫৪# “যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদের মৃত বলো না। বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা বুঝে না”। এবং সূরা আল ইমরানের ৩:১৬৯# “যারা আল্লাহর রাহে নিহত হয়, তাদেরকে তুমি কখনো মৃত মনে করো না। বরং তারা নিজেদের পালনকর্তার নিকট জীবিত ও জীবিকাপ্রাপ্ত”। এই আয়াত গুলি থাকার পরও যদি ওলি আউলিয়াদের যারা গালাগালি করবেন তারা আল্লাহর রোশানল থেকে কোন দিনও রেহাই পাবেন না। ওলি ফকিরদের সম্পর্কে রাছুল সা. বলেছেন ‘ফকিরি আমার গর্ভ’ ‘ফকির আমার ভেদ আমি ফকিরের ভেদ’। সকলের কাছে অনুরোধ প্রকৃত ওলি ফকিরদের গালাগালি করে নিজেদের আখেরাত নষ্ট করবেন না। শরিয়তে মানুষ দলে ভারী হলেও আল্লাহর দরবারে এই দল কোন কাজে আসবে না। আল্লাহ যার যার হিসাব তার তার কাছ থেকেই নিবেন। আর এই দলে ভারীদের ব্যপারে আল্লাহ সূরা আনআম ৬:১১৬# “আর যদি আপনি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের কথা মেনে নেন, তবে তারা আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে বিপথগামী করে দেবে। তারা শুধু অলীক কল্পনার অনুসরণ করে এবং সম্পূর্ণ অনুমান ভিত্তিক কথাবার্তা বলে থাকে”। অনেকে মনে করতে পারেন এই আয়াত শুধু রাছুল সা. এর জন্যই বলা হয়েছিল। সেটা সঠিক হবে না। কারণ সম্পূর্ণ কোরআন কিয়ামত পর্যন্ত উম্মতে মুহাম্মদির জন্যই পথের দিশা।
মারেফতের পির সাহেবগন কোরআন বিরোধী শিক্ষা প্রদানের জন্য অনুসারীরা আল্লাহ রাছুল সা. এর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে লোক সকল এমন সব কর্মে জড়িয়ে পরেন সেটা শরিয়তের দৃষ্টি কোন থেকে কোন ভাবেই মানা যায় না। এই কারণেই শরিয়তের আলেম সাহেবগন তাদের ওয়াজ মাহফিল বক্তিতা এমনকি ধর্মিও আলোচনায় বসলেই আলোচনার অধিকাংশ সময় জুড়েই আলেম সাহেবগন পির ফকিরদের গীবত করা শুরু করেন। এই গীবতে যে তাদের আমলও নষ্ট হয়ে যায় সেদিকে তাদের খেয়াল থাকে না। সে আলোচনা যখনই কোন মারেফতের অনুসারীদের কানে পৌঁচ্ছে মারেফতের অনুসারীরাও শরিয়তের আলেমগনদেরও পাল্টা গালাগাল শুরু করেন। গীবত করা তো আল্লাহ রাছুল সা. ইসলামের শিক্ষায় নাই। তবে কোন শিক্ষা থেকে এই গীবত করা হয়। আমাদের মুসলমান ধর্মের মত এত হানাহানি, দলবাজি, গলাবাজি অন্য কোন ধর্মে নিজেদের মধ্যে হয় না। হিন্দুরা বা খৃষ্ঠানরা নিজেরা নিজেদের গালি দিতে দেখা যায় না অন্তত ধর্মীয় ব্যাপারে। এত দলাদলি ছেড়ে কেন আমরা আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী মুসলমান হতে চেষ্টা করি না?