৫২ মফস্বল ডেস্ক।।
গ্রাহক হয়রানি, অফিস স্টাফদের দূর্ব্যবহার, নামজারি, মিস কেস পরিচালনা, খাস জমি বরাদ্দসহ নানা বিষয়ে বাড়তি অর্থ আদায়, দালালদের দৌরাত্বসহ নানা প্রকার অনিয়ম ও দূর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিনত হয়েছে পাবনার ঈশ্বরদী সহকারী কমিশনার ভূমি অফিস। ভুক্তভোগীদের বিস্তর অভিযোগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। আশ্চর্য্যরে বিষয় হল এই এলাকা পাবনা-৪ সংসদীয় আসন (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) বর্তমান সরকারের মাননীয় ভূমি মন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলু সাহেবের।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদ চত্বরে সহকারী কমিশনার ভূমি কার্যালয়টি অবস্থিত। দীর্ঘদিন থেকে এ অফিসে কর্মরত নাজির কাম ক্যাশিয়ারসহ অফিস স্টাফদের কয়েকজনের দূর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে সেবা নিতে আসা গ্রাহকরা। প্রতিটি নামজারি, মিস কেস পরিচালনা,খাস জমি বরাদ্দসহ নানা ক্ষেত্রে সরকারি আইন বর্হিভূতভাবে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়। চাহিদামতো অর্থ দিতে ব্যর্থ বা বিলম্ব হলে গ্রাহকদের দিনের পর দিন নাজেহাল ও হয়রানী করা হয়। অতিরিক্ত অর্থ আয়ের পথ পরিস্কার রাখার জন্য এ অফিসকে ঘিরে অভিযুক্ত কর্মচারীদের সহযোগীতায় গড়ে তোলা হয়েছে দালালচক্র। এ দালাল চক্রের মাধ্যমে উপজেলা পরিষদের গেটের সামনের চায়ের দোকানসহ আশপাশ থেকে গ্রামঞ্চল থেকে জমি সংক্রান্ত কাজে আসা সহজ-সরল ব্যক্তিদের নানাভাবে প্রতারীত করা হয়। এ অবস্থা দীর্ঘদিন থেকে চালু থাকাবস্থায় গত নয় মাসে তিনজন সৎ ও অভিজ্ঞ সহকারি কমিশনার ভূমিকে যোগদান করার পরপরই রহস্যজনত কারনে বদলি করা হয়।
ঐ তিন কর্মকর্তা তাদের সময়কালে এ অফিসের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালনের চেষ্ঠা করেন। প্রত্যেক কর্মকর্তাই যখন অফিসটিকে দুর্নীতি মুক্ত করার এবং ভুক্তভোগীদের সরকারী নিয়ম অনুযায়ি সেবা করার চেষ্টা করেছেন তখনই ঐসব দুর্ণীতিবাজ কর্মচারীরা নানা কায়দায় কর্মকর্তাদের বদলি করানোর ব্যবস্থা করেছে। বদলির পরপরই তারা অফিসটিকে ঘিরে নানা দুর্নীতি শুরু করেছে। গত ২৪ ডিসেম্বর নতুন সহকারি কমিশনার ভূমি হিসেবে যোগদান করেছেন মূকুল কুমার মৈত্র। তিনিও অফিসটিকে সরকারি নিয়ম অনুযায়ি দুর্নীতি মুক্তভাবে চালানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু দীর্ঘদিনের দুর্নীতিতে অভিজ্ঞ ঐসব কর্মচারীরা তাকে ছাপিয়ে সুকৌশলে নানা কায়দায় অতিরিক্ত অর্থ আদায় ও দালালদের মাধ্যমে গ্রাহকদের হয়রানী করে যাচ্ছে।
একই ভাবে ঐসব কর্মচারীদের সহযোগীতায় পৌর ভূমি অফিসসহ ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি ভূমি অফিসে গ্রাহকদের নিকট থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ নানা প্রকার হয়রানী করা অব্যাহত রয়েছে। তদন্ত করলে দেখা যাবে, কয়েকজন সহকারী ভূমি কর্মকর্তার বেতনের সাথে দৈনন্দিন জীবন-যাপন এবং খরচের মিল নেই। রাজকীয় জীবন-যাপনের সাথে তারা বিল্ডিং বাড়ি ঘরসহ প্রচুর অর্থ সম্পদের মালিক বনে গেছেন। ভূমি অফিস গুলোতে ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের কারনে সাধারন মানুষ নিঃস্ব হতে চলেছে। ভুক্তভোগীরা অনেকেই আক্ষেপ করে বলছেন, ভূমি অফিস গুলোর ইট, কাট,পাথরের ঘুষ খাওয়ার হাত থেকেও জমির মালিকদের রক্ষা নেই।
এসব অভিযোগের বিষয়ে ঈশ্বরদী ভূমি অফিসের নাজির কাম ক্যাশিয়ার জয়ন্ত বসু অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা ছোট কর্মচারী, আমাদের বক্তব্য দিয়ে কি হবে। অফিস যে ভাবে চালাবে আমরা সেই ভাবেই চলবো। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি, সঠিক উত্তর দিতে পারেননি।
ঈশ্বরদী উপজেলা সহকারি কমিশনার মূকুল কুমার মৈত্র অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি সদ্য যোগদান করেছি। চেষ্ঠা করছি সব কিছু ভালমতো যাতে করা যায়। বাংলাদেশের যে অবস্থা সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস, ভূমি অফিস, পাসপোর্ট অফিসসহ সব জায়গাতেই শুদ্ধি অভিযান চলছে। তারপরও আমরা তারাতারি পাঁচ ছয় মাসের মধ্যে ডিজিটালাইজেশনে চলে যাব, তখন আর আমাদের এ ঝামেলা গুলো থাকবে না।