বিশ্বনবী (সা.) ছিলেন হযরত ইব্রাহিম (আ.)’র পুত্র হযরত ইসমাইল (আ.)’র বংশধর। হযরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে মুহাম্মাদ (সা.) পর্যন্ত বংশধারায় কেউ কাফির বা মুশরিক ছিলেন না। অর্থাত মুহাম্মাদ (সা.)’র পূর্বপূরুষদের কেউ কাফির বা মুশরিক ছিলেন না (তাঁর বাবা ও দাদা থেকে শুরু করে প্রথম মানব আদম-আ. ও হাওয়া পর্যন্ত সবাই ছিলেন এক আল্লাহয় বিশ্বাসী তথা একত্ববাদী)। (তবে এই বংশধারারই প্রশাখা বা অন্য শাখাগুলোর ক্ষেত্রে এই সত্য সব সময় প্রযোজ্য নয়।)
বিশ্বনবী (সা.) ছিলেন কুরাইশ বংশের হাশিমি শাখার সদস্য।
তিনি ছিলেন গোটা বিশ্ব জগতের জন্য রহমত বা আল্লাহর অশেষ করুণার মাধ্যম (কুরআনে উল্লেখিত রাহমাতুললিল আলামিন)। তিনি ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী (কুরআনে উল্লেখিত খুলক্বুন আজিম) ও নিষ্পাপ। মানব জাতিকে সর্বোত্তম চরিত্রের সুষমায় মহিমান্বিত করার খোদায়ী ইচ্ছা বাস্তবায়নই ছিল তাঁর মিশন বা ইসলামের মূল লক্ষ্য। কারণ, মানুষ যদি সব ক্ষেত্রে সঠিক পথে থেকে সর্বোত্তম আচর-আচরণের অধিকারী হয় তাহলে তখনই তারা হবে মহান আল্লাহর প্রকৃত বান্দা তথা পৃথিবীর বুকে আল্লাহর প্রতিনিধি ও তখন তারা হবে ফেরেশতাদের চেয়েও উত্তম।
তিনি কখনও কোনো বিষয়ে (দুনিয়াবি বা বৈষয়িক ও ধর্মীয়সহ অন্য যে কোনো বিষয়ে) কোনো পাপ তো দূরের কথা সামান্য ভুলও করেননি। তবুও তিনি আল্লাহর ভয়ে সবচেয়ে বেশি কাঁদতেন ও সবচেয়ে বেশি ইবাদত করতেন এবং মহান আল্লাহর সর্বোত্তম দাস হিসেবেই তিনি ছিলেন সবচেয়ে স্বাধীন ও সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তিত্ব। তিনি সবচেয়ে গরিব বা দাস-শ্রেণীর সঙ্গে বসতে বা তাদের সঙ্গে খেতে লজ্জাবোধ করতেন না। তিনি ছিলেন সবচেয়ে নিরহংকার ও বিনম্র। জুতা সেলাই ও কাপড় সেলাই, কাপড় ধোয়া, ঘরদোর ঝাড়ু দেয়া, দুধ দোহন এবং প্রাত্যহিক অন্যান্য কাজ নিজেই করতেন, অন্য কারো ওপর চাপিয়ে দিতেন না। তিনি সব বিষয়ে শ্রেষ্ঠ বা সর্বোত্তম সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হলেও কখনও কখনও সাহাবিদের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যাতে পরামর্শের এবং অন্যদের বা মজলিশে উপস্থিত বেশিরভাগ সদস্যের (যৌক্তিক) মতামতের প্রতি সম্মানের গুরুত্ব ফুটে উঠে ও স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতা সৃষ্টি না হয় মানুষের মধ্যে।
তিনি সব সময় হাসিমুখে থাকতেন এবং কারো সঙ্গে দেখা হলে নিজেই আগে সালাম দিতেন এবং এমনকি শিশুদেরও সালাম দেয়ার সুযোগ না দিয়ে তিনি নিজেই তাদের আগে সালাম দিতেন। শিশুদের সঙ্গে তাদের মতো করে কোমল স্বরে কথা বলতেন এবং তাদের সঙ্গে তাদের পোষা পাখি ও খেলনার বিষয় নিয়েও কথা বলতেন।
মিষ্টভাষী আল্লাহর সর্বশেষ নবী (সা.)’র বাহ্যিক চেহারা ছিল অত্যন্ত লাবণ্যময় এবং হযরত ইউসুফ (আ.)’র চেয়েও তিনি ছিলেন বেশি সুদর্শন। সুঠাম দেহের অধিকারী বিশ্বনবী (সা.) যুদ্ধ-বিদ্যায় ও সাহসিকতায়ও ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বীর। তিনি যুদ্ধ করতেন রণক্ষেত্রের সম্মুখ কাতারে। (যুদ্ধের প্রচণ্ডতায় বা তীব্রতায় অন্য সবাই দিশেহারা হয়ে পড়লেও তিনি বীর বিক্রমে যুদ্ধ চালিয়ে যেতেন এবং এতে সাহাবিরা সাহস ফিরে পেতেন ও তাঁর আশ্রয়ে থেকে আবারও যুদ্ধ শুরু করতেন।)
মহান আল্লাহই তাঁর শিক্ষক ছিলেন বলে তিনি ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী। নবুওত লাভের আগে পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন রাখাল ও পরবর্তীকালে অত্যন্ত সফল ব্যবসায়ী।
তিনি সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি হয়ে থাকতেন এবং সব সময় সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। তিনি কখনও কোনো ক্ষেত্রে অপব্যয় করতেন না, আবার কৃপণতাও করতেন না।
বিশ্বনবী (সা.) উচ্চ কোনো আসনে বসতেন না বা মজলিসের সবচেয়ে ভালো জায়গাটি নিজের জন্য নির্ধারিত করতেন না। ফলে বিদেশ থেকে কোনো প্রতিনিধি বা অপরিচিত কোনো ব্যক্তি আসলে সাহাবিদের মধ্যে একাকার হয়ে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে আল্লাহর নবী (সা.) কে তা বুঝতেই পারত না।
তিনি ছিলেন অসহায়, ইয়াতিম, দরিদ্র ও মজলুমের বন্ধু এবং জালিমদের ঘোর শত্রু । অন্যদিকে তাঁর মত ক্ষমাশীল ও সহনশীল ব্যক্তির দৃষ্টান্ত ইতিহাসে আর নেই।
পবিত্র কুরআনের ভাষায় তথা মহান আল্লাহর ভাষায় ‘যারা আল্লাহ ও শেষ দিবস তথা বিচার-দিবসে বিশ্বাসী এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করে, তাদের জন্যে রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম নমুনা বা আদর্শ।’ (সুরা আহজাব-২১)
এই উত্তম আদর্শ শুধু ব্যক্তিগত বা ধর্মীয় বিষয়েই সীমিত নয়। রাষ্ট্রনীতি, রাজনীতি বা সমাজনীতি কিংবা সাংস্কৃতিক বিষয় থেকে শুরু করে জীবনের সব বিষয়ে মুহাম্মাদ (সা.)’র আদর্শকেই সর্বোত্তম আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করতে কেউ ব্যর্থ হলে সে আসলে পবিত্র কুরআনের এই আয়াতকেই অমান্য করল। তাই কেউ যদি বলে, আমি মুসলমান অথচ ধর্মনিরপেক্ষতা আমার আদর্শ, কিংবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাশ্চাত্যের কথিত গণতন্ত্র আমার আদর্শ তাহলে সে প্রকৃতপক্ষে রাসূল (সা.)-কে জীবনের সব ক্ষেত্রে উত্তম আদর্শ হিসেবে মেনে নিল না। আর এক্ষেত্রে আল্লাহ ও বিচার-দিবসের প্রতি তার বিশ্বাস এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করার দাবি বা চেষ্টা মুনাফেকি ও কুফরি ছাড়া অন্য কিছু বলে গ্রহণযোগ্য হবে না।
তাওরাতসহ অতীতের কোনো কোনো ধর্মগ্রন্থে বিশ্বনবী (সা.)’র নাম ‘আহমাদ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ওয়াহাব নন্দিনী মা আমিনা নবজাতক মুহাম্মাদ (সা.)’র নাম রেখেছিলেন আহমাদ। দাদা আবদুল মুত্তালিব মহান আল্লাহর ইশারায় তার এই প্রিয় নাতির নাম রেখেছিলেন ‘মুহাম্মাদ’ (সা.) তথা ব্যাপক প্রশংসিত বা প্রশংসার যোগ্য। আহমাদ নামের অর্থও প্রশংসিত। তাঁর অন্য কয়েকটি উপাধি ও প্রসিদ্ধ নাম হল: আবুল কাসিম (কাসিমের পিতা), আবু ইব্রাহিম (ইব্রাহিমের পিতা), রাসূলুল্লাহ বা আল্লাহর রাসূল, নবীউল্লাহ বা আল্লাহর নবী, মুস্তাফা বা নির্বাচিত, মাহমুদ, আমিন (বিশ্বস্ত ও সত্যবাদী), উম্মি (নিরক্ষর), খাতাম (শেষ বা সিল), মুজাম্মিল (কাপড়ে আবৃত), মুদাসসির (চাদরে আবৃত), নাজির বা সতর্ককারী, বাশির বা সুসংবাদদাতা, মুবিন (ব্যাখ্যাকারী), কারিম বা দয়ালু, নুর বা আলো, রহমত বা আশীর্বাদ, … নেয়ামত, শাহেদ বা সাক্ষ্য, মুবাশশির (সুখবরদাতা), মুজাক্কির, ইয়াসিন, তাহা ইত্যাদি।
শহরের দূষণমুক্ত পরিবেশে ও প্রকৃতির খোলামেলা কোলে রাখার জন্য ধাত্রী হালিমার কাছে রাখা হয়েছিল শিশু মুহাম্মাদ (সা.)-কে। হালিমা ছিল অত্যন্ত পবিত্র ও দয়ালু নারী।
বিশ্বনবী (সা.) ছয় বছর বয়সে মাতা আমিনাকে হারিয়েছিলেন। (মদীনার কাছে আবওয়া এলাকার তাঁর কবর রয়েছে।) ফলে তার অভিভাবক হন দাদা আবদুল মুত্তালিব। কিন্তু নবীজি (সা.) আট বছর বয়সে দাদাকেও হারান। এরপর অভিভাবক হন চাচা আবু তালিব। তিনি ভাতিজার সর্বোত্তম যত্ন নেয়ার ও দেখাশুনার দায়িত্ব পালনের যথাসাধ্য চেষ্টা করতেন। সিরিয়ায় বাণিজ্য সফরে নিজের সঙ্গে ভাতিজাকে নিয়ে গেলে ‘বাহিরা’ নামের এক সন্ন্যাসী তার মধ্যে নবুওতের নানা লক্ষণ দেখতে পান এবং ভাতিজার নিরাপত্তার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে চাচা আবু তালিবকে উপদেশ দেন।
বিশ্বনবী (সা.)’র প্রথম স্ত্রী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন খোয়ালিদের কন্যা হযরত খাদিজা (সালামুল্লাহি আলাইহা)। এই বিয়ের সময় বিশ্বনবী (সা.)’র বয়স ছিল ২৫। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নারী হযরত ফাতিমা (সা.) ছিলেন এই বিয়ের ফসল।
যে কোনো নবীর জন্মের সময় ও তার কিছু আগে এবং পরে অলৌকিক নানা ঘটনা ঘটে থাকে যাতে জনগণ আল্লাহর নবীকে মেনে নেয়ার জন্য প্রস্তুত হতে পারে।
যেমন, আল্লাহর নির্দেশে মায়ের হাতে নবজাতক মুসা নবী (আ.)-কে কাঠের বাক্সে চড়িয়ে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া ও ফেরাউনের ঘরেই তাঁর আশ্রয় লাভ। অথচ ফেরাউন মুসা (আ.)’র জন্ম ঠেকানোর জন্য হাজার হাজার শিশু হত্যা করেছিল।
এ ছাড়াও পিতা ছাড়া হযরত ঈসা (আ.)’র জন্মগ্রহণ এবং দোলনায় বসে নিজের নবুওত সম্পর্কে বিশুদ্ধ ভাষায় কথা বলার ঘটনা এ প্রসঙ্গে স্মরণ করা যায়।
অবশ্য অন্য যে কোনো নবীর চেয়ে এ ধরনের অলৌকিক ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে বিশ্বনবী (সা.)’র ক্ষেত্রে এবং এইসব ঘটনা ছিল অনেক বেশি বিস্ময়কর। এর কারণ, বিশ্বনবী (সা.) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ নবী এবং তাঁর ওপর নাজিল হওয়া ধর্ম বা শরিয়তও সবচেয়ে পরিপূর্ণ বা পূর্ণাঙ্গ। আর এই ধর্ম কিয়ামত পর্যন্ত বা বিশ্বের শেষ দিন পর্যন্ত টিকে থাকবে ও শক্তিশালী হয়ে থাকবে। অন্য নবী-রাসূলরা এসেছিলেন বিশেষ জাতি ও বিশেষ সময়ের জন্য। কিন্তু ইসলাম এসেছে সব মানুষ ও জিনের জন্য এবং কিয়ামত পর্যন্ত তা আল্লাহর মনোনীত শ্রেষ্ঠ ধর্ম।
এবারে আমরা বিশ্বনবী (সা.)’র জন্মের প্রাক্কালে ও জন্মের পরে সংঘটিত কিছু অলৌকিক ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরছি:
১. সততা ও সত্যবাদীতার জন্য সাদিক্ব উপাধি পাওয়া নবী-বংশে জন্ম-নেয়া ইমাম হযরত ইমাম সাদিক্ব (আ.) বলেছেন, শয়তান বা ইবলিস অতীতে সপ্তম আকাশ পর্যন্ত যেতে পারত। অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে জানার জন্য সে সপ্তম আকাশ পর্যন্ত যেত। কিন্তু হযরত ঈসা (আ.)’র জন্মের পর থেকে চতুর্থ আকাশের ওপরে ওঠা তার জন্য নিষিদ্ধ হয়ে যায়। এরপর যখন বিশ্বনবী (সা.) জন্ম নেন তখন তারা জন্য সব আকাশই নিষিদ্ধ হয়ে যায়। শয়তানকে আকাশের দরজাগুলো থেকে ধূমকেতু দিয়ে বিতাড়ন করা হয়।
২. যেই ভোর বেলায় মহানবী (সা.) জন্ম নেন, সেদিন বিশ্বের সবগুলো মূর্তি মাটির দিকে নত হয়ে পড়ে।
৩. সেদিনই ইরানের রাজার বিশাল প্রাসাদের বারান্দা কেঁপে ওঠে এবং ছাদের ১৪টি প্রাচীর ধ্বসে পড়ে।
৪. সেদিনই ইরানের সভে অঞ্চলর হ্রদটি তলিয়ে শুকিয়ে যায়। বহু বছর ধরে এই হ্রদের পূজা করা হত।
৫. সামাভে অঞ্চলে ( কুফা ও সিরিয়ার মধ্যবর্তী) পানির প্রবাহ সৃষ্টি হওয়া। অথচ বহু বছর ধরে সেখানে কেউ পানি দেখেনি।
৬. ইরানের ফার্স অঞ্চলের ( বর্তমান যুগের শিরাজ শহর সংলগ্ন) অগ্নি উপাসনালয়ের আগুন সেই রাতে নিভে যায়। অথচ ওই আগুন এক হাজার বছর পর্যন্ত প্রজ্বলিত ছিল।
৭. ইরানি সম্রাটের প্রাসাদের খিলান আকৃতির তোরণ ভেঙ্গে যায় মাঝখান দিয়ে। ফলে তা দুই টুকরো হয়ে যায়।
৮. সেই রাতে বেলায় হিজাজ বা বর্তমান সৌদি আরব থেকে একটি আলো দৃশ্যমান হয় এবং তা পূর্বাঞ্চলসহ সারা বিশ্বের ছড়িয়ে পড়ে।
৯. সেই ভোরে বিশ্বের সব সম্রাটের সিংহাসন উল্টে পড়েছিল।
১০. সেই দিন বিশ্বের সব রাজা বোবা হয়ে পড়েছিলেন। অর্থাত তারা কথা বলতে পারছিলেন না।
১১. সেই দিন গণকদের সব জ্ঞান লুপ্ত হয় এবং জাদুকরদের জাদুগুলো অকার্যকর হয়ে পড়ে।
বিশ্বনবীর মাতা মা আমিনা (সা. আ.) বলেছেন: আল্লাহর কসম, আমার পুত্র জন্ম নিয়েই তাঁর হাতগুলোকে মাটিতে রেখে মাথা আকাশের দিকে তোলে এবং চারদিকে তাকায়। এরপর তাঁর থেকে একটি নূর বা আলো ছড়িয়ে পড়ে ও সে আলোয় সব কিছু দৃশ্যমান হয়। সেই আলোয় সিরিয়ার (রোমানদের) প্রাসাদগুলো দেখলাম এবং সেই আলোর মধ্যে একটি শব্দ শুনলাম যে বলছিল: সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষকে জন্ম দিয়েছ, তাই তাঁর নাম রাখ ‘মুহাম্মাদ’।
বর্ণনায় এসেছে, বিশ্বনবী (সা.)’র জন্মের সময় (বড় ও মূল) শয়তান তার সন্তানদের মধ্যে আর্তনাদ করে ওঠে। ফলে সবগুলো শয়তান তার কাছে এসে বলে: কেন এত পেরেশান বা উদ্বিগ্ন হয়েছ? সে বলল: তোমাদের প্রতি আক্ষেপ! রাতের প্রথম থেকে এ পর্যন্ত দেখছি যে আকাশ ও জমিনের অবস্থা বদলে গেছে। ভূপৃষ্ঠে ঘটে গেছে এক বিরাট ঘটনা। ঈসা (আ.) ঊর্ধ্ব আকাশে চলে যাওয়ার পর আর কখনও এত বড় ঘটনা ঘটেনি। সবাই গিয়ে খোঁজ-খবর নাও যে কি ঘটেছে।
শয়তানরা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে ও ফিরে এসে বলে: তারা বলে কিছুই তো দেখলাম না।
বড় শয়তান বা শয়তানদের নেতা তখন বলল: এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়া আমারই কাজ।
এরপর সে পবিত্র মক্কার কাবাঘর সংলগ্ন অঞ্চলে আসল। সে দেখল যে ফেরেশতারা কাবাঘরের চারদিক ঘিরে রেখেছেন। শয়তান সেখানে ঢুকতে চাইলে ফেরেশতারা হুংকার দিলেন। ফলে সে ফিরে আসে ও চড়ুই পাখির মত ছোট হয়ে হেরা পর্বতের দিক থেকে সেখানে প্রবেশ করে। জিবরাইল (আ.) বললেন: ফিরে যা ওরে অভিশপ্ত! সে বলল: হে জিবরাইল (ফেরেশতা), আমার একটা প্রশ্ন আছে, বলতো আজ রাতে কি ঘটেছে।
জিবরাইল (আ.) বললেন: সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদ (সা.) আজ রাতে জন্ম নিয়েছেন।
শয়তান প্রশ্ন করল: তার মধ্যে কি আমার কোনো (কর্তৃত্বের) অংশ আছে?
জিবরাইল (আ.) বললেন: না।
সে তথা ইবলিস বা শয়তান আবার প্রশ্ন করল: তাঁর উম্মতের মধ্যে কি আমার কোনো (কর্তৃত্বের) অংশ আছে?
জিবরাইল (আ.) বললেন: হ্যাঁ।
ইবলিস বলল: আমি সন্তুষ্ট হলাম।
আমিরুল মু’মিনিনি আলী (আ.) বলেছেন, সে রাতে তথা রাসূলে খোদার (সা.)’র জন্মের রাতে পুরো দুনিয়া আলোকিত হয়। প্রতিটি পাথর ও মাটির টুকরো এবং বৃক্ষ বা গাছ হেসেছে। আর আকাশ ও জমিনের সব কিছু আল্লাহর তাসবিহ বা প্রশংসা জ্ঞাপন করেছে।