৫২ রাজনীতি ডেস্ক।।
বিএনপি-জামায়াত জোটের টানা অবরোধ ও নাশকতা ঠেকাতে এবার ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্নে’ সরকার। এ জন্য গত সপ্তাহে পুলিশের কর্তাব্যক্তিদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘নাশকতা ঠেকাতে যা দরকার তাই করবেন দায়ভার আমার।’ আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ কয়েক নেতা প্রতিবেদককে প্রধানমন্ত্রী ও তার পরদিন রাষ্ট্রপতির বক্তব্য স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, সরকার এখন ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্নে’। কঠোরতা থেকে পিছু ফেরা বা ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। সারাদেশের তৃণমূল প্রশাসনেও ইতিমধ্যে কঠোর বার্তা দেয়া হয়েছে।
সঙ্গে ১৪ দলের সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটির সদস্যরাও থাকবেন। এদিকে আগামী রোববার থেকে শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষার সময় বিএনপি জোটের হরতাল প্রতিরোধ করতে তৃণমূলে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল। ইতিমধ্যেই চলমান এসএসসি পরীক্ষা নির্বিঘ্ন করতে সারাদেশে জোটের নেতাকর্মীদের সতর্ক পাহারা বসানোর নির্দেশ দিয়েছেন জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম।
তিনি বলেন, ২ ফেব্রুয়ারির পর জনগণই অবরোধ প্রতিরোধ করবে। এসএসসি পরীক্ষায় অভিভাবকদের পাশে দাঁড়ানোর মধ্য দিয়ে জনগণের আরো কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ হবে বলে মনে করছেন শাসক দলের নেতারা।
তারা বলেন, এসএসসি পরীক্ষা শুরুর আগের দিন থেকে ৭২ ঘণ্টার হরতাল ঘোষণা করে বিএনপি আরো জনবিচ্ছিন্ন হলো। এ সুযোগে জনগণকে সঙ্গে নিয়েই হরতাল প্রতিরোধ করে রাজনৈতিকভাবে বিএনপিকে আরো তাড়াতাড়ি পরাস্ত করা হবে। জানা যায়, এ সময়ে বড় কোনো নাশকতা হলেই বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বকে মামলার মুখোমুখি করা হতে পারে। আওয়ামী লীগ নেতাদের ধারণা, তখন জনসমর্থনও সরকারের পক্ষে থাকবে।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, আগামী সোমবার থেকে বিএনপির অরাজনৈতিক এ সন্ত্রাস, নাশকতা ও জঙ্গিবাদ বন্ধ না হলে বাংলার জনগণের আদালতে তাদের বিচার হবে। এসএসসি পরীক্ষার শুরুতেই বিএনপি জোটের টানা তিন দিনের হরতালকে কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এই প্রতিবেদককে বলেন, বেগম খালেদা জিয়া তার সন্তানের মৃত্যুতে শোকাহত নন; বরং সন্তানের জানাজা দেখে উল্লসিত।
এবার দেশের মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে খালেদা জিয়া নিজের রাজনৈতিক জানাজার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাকে রাজনৈতিক দাফনও করা হবে। বিএনপির টানা নাশকতায় সরকারের কঠোর পদক্ষেপে আস্থা প্রকাশ করে তিনি বলেন, পৃথিবীর কোথাও নাশকতা ও সন্ত্রাসাবাদ কখনো জয়ী হয়নি। রাজনীতির মধ্যে ধ্বংস ও নৈরাজ্যের স্থান নেই। তাই খালেদা জিয়াও পরাজিত হবেন।
খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এক নেতা বলেন, খালেদা জিয়া তো ভিন গ্রহের প্রাণী নন; যে নৈরাজ্য করে পার পেয়ে যাবেন। তার জন্য আলাদা আইনও নাই। সময়মতোই তাকে জনতার কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে।
আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানায়, খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের বিষয়ে এক রকম সিদ্ধান্ত সরকারের আছে। তবে খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পরপর এখনই তাকে গ্রেফতার করলে দেশের মানুষের একটা সহানুভূতি বিএনপি চেয়ারপার্সন পাবেন। তাই এসএসসি পরীক্ষায় কোনো ব্যাঘাত ঘটলে দেশের মানুষের ক্ষোভ আরো বাড়বে। এর ফলে তাকে গ্রেফতারের একটি প্রেক্ষাপটও তৈরি হবে।
জানা যায়, এ জন্য গত সপ্তাহে জাতিসংঘের রুটিন ব্রিফিংয়ে এর মুখপাত্র বাংলাদেশ বিষয়ে বলেছেন, বিরোধী নেতাদের যেন আইন মেনে গ্রেফতার করা হয়। আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, এর মধ্য দিয়ে বিএনপি-জামায়াতের এ আন্দোলনকে তারাও নাশকতা হিসেবেই দেখছেন। এ কারণেই গ্রেফতারের কোনো নিন্দা উদ্বেগ প্রকাশ না করে বলেছেন আইন মেনে করার জন্য। এ কারণেই সরকার আস্তে আস্তে সে পথে হাঁটছে।
আওয়ামী লীগ নেতাদের ধারণা, এসএসসি পরীক্ষার সময়ে হরতাল দিয়ে বিএনপি রাজনীতিতে আরেকটি ভুল করল। ১৪ লাখ পরিবারের সঙ্গে জড়িত অন্তত এক কোটি নাগরিক খালেদা জিয়ার এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান জানান দেবে। আর এসব কোমলমতী পরীক্ষার্থীকে শঙ্কার মধ্যে ফেলায় দেশ-বিদেশেও খালেদা জিয়ার ভাবমূর্তি আরো ঠুনকো হবে। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আরো জনমত সৃষ্টি করতে পারবে। তখন সরকারকে খালেদা জিয়ার গ্রেফতার করা দরকার হবে না।
দেশের জনগণই তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য দেশব্যাপী দাবি জানাবে। আওয়ামী লীগ ও সরকার সে সময়ের জন্যই অপেক্ষা করছে। এ সময়ের মধ্যে শ্রমিক সংগঠন, বিভিন্ন পেশাজীবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে নিয়ে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাজধানীসহ সারাদেশে জনমত গঠন করা হবে।
গতকাল শুক্রবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এমন একটি সমাবেশ হয়েছেও। সমাবেশ থেকে আগামী ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে অবরোধ প্রত্যাহার করতে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে সময় বেঁধে দিয়েছে শ্রমিক-কর্মচারী-পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ। এ সময়ের মধ্যে অবরোধ প্রত্যাহার করা না হলে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নের হুমকি দেয়া হয়।
এছাড়া বিগত টানা অবরোধের সময় বিএনপির নাশকতার বিরুদ্ধে দেশব্যাপী যে জনমত সৃষ্টি হয়েছে তা ধরে রাখতে চলতি সপ্তাহ থেকে শাসক দলের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা মাঠে নামছেন। শ্রমিক-মুক্তিযোদ্ধা ও অন্য পেশাজীবী সংগঠনগুলোও মাঠে নামছে। গত কয়েকদিন ধরেই শ্রমিক সংগঠনগুলো রাজপথে জনমত তৈরির কাজ করছে। খালেদা জিয়ার কার্যালয় ঘেরাও করার চেষ্টাও করেছে। এরই মধ্যে এসএসসি পরীক্ষায় হরতাল আহ্বান করার পর আগামীকাল রোববার সংবাদ সম্মেলন করে কর্মসূচি ঘোষণা করবে ছাত্রলীগ। সংগঠনের সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা বিএনপির এমন কর্মসূচির নিন্দা জানাই। দেশের ১৪ লাখ শিক্ষার্থীর জীবন নিয়ে খালেদা জিয়া যে রাজনীতি শুরু করছেন তার জবাব দিতে আমরা ছাত্রসমাজকে প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
আর সারাদেশে নাশকতা ঠেকাতে গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত পুলিশ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীসহ পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা সারাদেশের পুলিশ কর্মকর্তাদের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যা যা করণীয় তাই করার নির্দেশ দিয়েছেন। কঠোর বার্তা নিয়ে তারা নিজ কর্মস্থলে গেলেন। আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, এ লড়াই তাদের অস্তিত্বের লড়াই। এবারো খালেদা জিয়াকে পরাজিত করতে চান তারা।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তও খালেদা জিয়াকে দুই দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন। গতকাল এক সভায় খালেদা জিয়ার উদ্দেশে তিনি বলেন, অবরোধ তোলার বিষয়ে আপনি যদি কোনো সিদ্ধান্ত না নেন, তাহলে সরকারও বিকল্প প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে। মনে রাখবেন, সরকারেরও ধৈর্যের একটি সীমা আছে।
তিনি আরো বলেন, সহিংসতা বন্ধ করতে প্রধানমন্ত্রীর হাতে সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা ছাড়াও বিকল্প অনেক মাধ্যম আছে। যা এখনো ছোঁয়া হয়নি। কতদিন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ধৈর্যের পরিচয় দেবেন তা সময়ই বলে দেবে। সূত্র : মানবকণ্ঠ।