২ ফেব্রুয়ারি সোমবারের নির্ধারিত পরীক্ষা নেওয়া হবে ৬ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে। ফলে পরীক্ষার্থীদের প্রথম পরীক্ষায় বসতে হবে ৪ ফেব্রুয়ারি বুধবার।
শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ রোববার সচিবালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “অমানবিক কর্মকাণ্ড চলছে, এই পরিস্থিতিতে ছেলে-মেয়েদের হিংস্রতার মধ্যে ফেলে দিতে পারি না। তাদের নিরাপত্তা ও জীবনই আমাদের কাছে বড়।”
মন্ত্রী বলেন, সবাই মিলে আবেদন করেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। চোরাগোপ্তা হামলা হচ্ছে, লোক মারা যাচ্ছে। যারা বেঁচে আছেন তারা মৃত্যুর চেয়েও কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।
“আমরা আমাদের দায়িত্ব এড়াতে পারি না। বড় বড় কথা বলা সম্ভব কিন্তু বাস্তবে কাজটা করলে বোঝা যায় সেটা কতটা কঠিন, আর দায়দায়িত্ব নিয়ে করতে হয়।”
সোমবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত আটটি সাধারণ বোর্ডের অধীনে এসএসসিতে বাংলা (আবশ্যিক) প্রথম পত্র, সহজ বাংলা প্রথম পত্র এবং বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের সংস্কৃতি প্রথম পত্রের পরীক্ষা ছিল।
এদিন মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে দাখিলে কুরআন মাজিদ ও তাজবীদ এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে এসএসসি ভোকেশনালে সকালে বাংলা-২ (১৯২১) সৃজনশীল এবং বিকালে বাংলা-২ (৮১২১) সৃজনশীল বিষয়ের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল।
এ পরীক্ষাগুলো আগামী শুক্রবার হবে বলে মন্ত্রী জানান।
প্রথম দিনের পরীক্ষা পিছিয়ে গেলেও ৪ ফেব্রুয়ারি বুধবার নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী পরীক্ষা হবে। ওই দিনই হবে এবারের এসএসসির প্রথম পরীক্ষা।
বুধবার সকাল ১০টা থেকে এসএসসিতে বাংলা (আবশ্যিক) দ্বিতীয় পত্র, সহজ বাংলা দ্বিতীয় পত্র এবং বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের সংস্কৃতি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা হবে।
ওই দিন মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে দাখিলে হাদিস শরিফ এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে এসএসসি ভোকেশনালে সকালে ইংরেজি-২ (১৯২২) এবং বিকালে ইংরেজি-২ (৮১২২) বিষয়ের পরীক্ষা হবে।
এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেবেন ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ২৬৬ জন শিক্ষার্থী।
‘রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে’ নাশকতায় উদ্বেগ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “আমরা খুবই মর্মহত যে, ঠিকমত পরীক্ষাটাও নিতে পারি না। খুবই উদ্বেগের মধ্যে আমরা দিন কাটাচ্ছি। অনিশ্চয়তা, উদ্বেগ, অচিন্ত্যনীয় ও অমানবিক পরিবেশের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে।”
নাহিদ বলেন, “দেশে যা চলছে তা কারো কাছেই কাম্য ছিল না। শিক্ষার ক্ষতিটা তাৎক্ষণিক দেখা যায় না। সবার মধ্যেই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, যার জন্য আগামী ৩০ বছর সাফার করতে হবে।”
হরতালের কারণে প্রথম দিনের পরীক্ষা পেছালেও অন্যদিন শুধু অবরোধ থাকলে যথারীতি পরীক্ষা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “অবরোধে কিছু হয় না দেখেই তারা হরতাল দিচ্ছে, তাই হরতালে পরীক্ষা বন্ধ রাখা হবে। আশা করছি পরীক্ষার দিন হরতাল তো হবে না অবরোধও থাকবে না। এটা না করলে মানুষের কাছে কীভাবে মুখ দেখাবেন?”
এর আগে হরতালে পরীক্ষা পেছানোর কথা তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “নির্ধারিত সময়ে ক্লাস শুরু হচ্ছে, পরীক্ষা হচ্ছে, ফলাফলও দিচ্ছি। কিন্তু গত বছরও পরীক্ষা ঠিক সময়ে নিতে বাধার মুখে পড়তে হয়েছে।”
বাকি পরীক্ষাগুলো নির্বিঘ্নে নেওয়ার আশা প্রকাশ করে নাহিদ বলেন, “নতুন করে হরতাল আর নেই। আর দেশের মানুষের মনভাবটা প্রকাশ পেয়েছে। তাই পরীক্ষার তারিখগুলোতে নতুন করে হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি কেউ দেবেন না- এই আবেদন জানাচ্ছি।”
“এইটুকু মূল্যবোধ, মানবিকতা ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা যদি কারও না থাকে তাহলে তাদের কাছে মানুষ কী আশা করতে পারে”, প্রশ্ন রাখেন তিনি।
পরীক্ষার মধ্যে আবারও হরতাল দেওয়া হলে সমাধান কি হবে- এমন প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “যারা দিনের পর দিন হরতাল দিয়ে রেখেছে তাদেরকে বলেন। হরতাল তুলে নেওয়াটাই হল স্থায়ী সমাধান।”
পরীক্ষা নিয়ে কি হবে- বিএনপি নেতা হাফিজ উদ্দিন আহমেদের এমন মন্তব্যে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানান নাহিদ।
তিনি বলেন, “যে দল রাজনীতি করবে, যারা দেশের ভবিষ্যৎ গড়বেন তারা যদি এ কথা বলেন তাহলে তো উত্তর পেয়েই গেলাম।”
বিএনপি-জামায়াত জোটের হরতালে ২০১৩ সালে এসএসসির ৩৭টি বিষয় এবং এইচএসসির ৪১টি বিষয়ের পরীক্ষা পিছিয়ে যায়।
ওই বছরের জেএসসি-জেডিসির ১৭টি বিষয় এবং প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনীর দুটি বিষয়ের পরীক্ষা হরতালের কারণে পিছিয়ে দেওয়া হয়।
গত বছরের শেষ দিকে অনুষ্ঠিত জেএসসি-জেডিসি এবং প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী পরীক্ষাও বিএনপির হরতালের কবলে পড়লে বেশ কয়েকটি পরীক্ষাও পিছিয়ে যায়।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুনসহ ঢাকা বোর্ডের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।