৫২ আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।
ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের গভীরতা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ ওবামার সাম্প্রতিক ভারত সফরের পর। মোদির সঙ্গে ওবামার সাক্ষাতের পর দুই দেশের সম্পর্ক নতুন একটি উচ্চতায় পৌঁছেছে। আর এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পররাষ্ট্রনীতি সরকার সাজাবে।
গত সপ্তাহে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ওবামার ভারত সফর ও এর ফলে এ অঞ্চলে তার প্রভাব এবং বাংলাদেশের করণীয় বিষয়ে একটি বৈঠক হয়। এর পরে নয়াদিল্লি ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সুসম্পর্ক বেইজিংয়ের জন্য হুমকি, এমনটা মনে করার কোন কারণ নেই বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। ওবামা বলেন, আমি যখন শুনলাম, চীন সরকার এ ধরনের বিবৃতি প্রকাশ করেছে, তখন আমি বিস্মিত হয়েছিলাম। সিএনএন’র সাংবাদিক ফরিদ জাকারিয়াকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ওবামা একথা বলেন।
কর্মকর্তা আরও বলেন, এ সফরের কারণে চীন বা পাকিস্তানের ব্যবহারেও পরিবর্তন আসতে পারে এবং বাংলাদেশ তাও বিবেচনা করবে। তিনদিনের ভারত সফরের শেষ দিন অর্থাৎ, গত ২৭শে জানুয়ারি ওবামা এ মন্তব্য করেন।
এ প্রসঙ্গে গত নভেম্বরে চীন সফরের কথা উল্লেখ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ওই সফরে কয়েকটি বেশ সফল ও ফলপ্রসূ আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। বিশ্বের সব দেশের সঙ্গেই সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করার মাধ্যমে সুসম্পর্ক গড়ার আশা প্রকাশ করেন তিনি।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্কের পরিবর্তন হচ্ছে এবং এখানে যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্তি বাংলাদেশের জন্য সুযোগ তৈরি করতে পারে বলেও জানান তিনি।
ওই কর্মকর্তা আরও যোগ করেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে যোগাযোগ, পানি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, অভিবাসন ও জ্বালানি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র- দুইদেশের ক্ষেত্রেই বিষয়গুলো প্রযোজ্য।
বাংলাদেশের উচিৎ হবে অর্থনৈতিক সম্পর্কের ওপর জোর দেওয়া এবং এসময় সরকারের উচিৎ হবে ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন কূটনীতিবিদদের ব্যবহার করা।
নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া স্টিফেন ব্লুম বারনিক্যাট গত মাসে ঢাকায় এসেছেন এবং বুধবার রাষ্ট্রপতির কাছে পরিচয়পত্র জমা দেবেন। বাংলাদেশে নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত হয়েছেন মার্সিয়া স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিক্যাট। তিনি ঢাকায় নিযুক্ত বর্তমান মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজীনার স্থলাভিষিক্ত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা গত ২২ মে মার্সিয়াকে বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের পদে মনোনয়ন দেওয়ার ঘোষণা দেন। হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে দেওয়া বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এর আগে তিনি সেনেগাল ও গিনি-বিসাউয়ে রাষ্ট্রদূত ছিলেন। ২০০৬-০৮ সাল পর্যন্ত মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোতে কাজ করেছেন। এ ছাড়া আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন এই নারী কূটনীতিক।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, বারনিক্যাট দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আশা করে বারনিক্যাট তার পূর্বসূরি ড্যান মোজেনার চেয়ে বেশি বিচক্ষণতা প্রদর্শন করবেন।
মোজেনা ২০১১ সালে বাংলাদেশে নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে আসার পর বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেছিলেন।
এবার বারনিক্যাটকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছিল এবং তিনি মন্ত্রণালয়ের কথা রেখেছিলেন।
এটা ভালো লক্ষণ যে তিনি আমাদের কথা রেখেছেন, কর্মকর্তাটি বলেন। তিনি বলেন বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক সরকারের অনুসৃত নীতি অনুযায়ী হবে। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মার্কিন কূটনীতিকদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক বজায় রাখবে।
এ প্রথমবারের মতো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মাহফুজুর রহমান বারনিক্যাটকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান। এছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলি ও পররাষ্ট্র সচিব এম শহিদুল হক মার্কিন কূটনীতিকদের সাথে ভালো ব্যক্তিগত সম্পর্ক বজায় রেখে চলেন।
এর আগে বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন। বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল শান্তিপূর্ণভাবে তাদের বিরোধ মিটমাটে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই সংঘাত বাড়ছে বলে বিবৃতিতে বলা হয়। এ সংঘাতকে উদ্বেগজনক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন মানবাধিকার কমিশনের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি।
জেনেভায় এক সংবাদ বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন। বিবৃতিতে চলমান রাজনৈতিক সংঘাতে যেসব হত্যাকাণ্ড হয়েছে তার সবগুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করা হয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ড সরকার বা সরকারের বাইরে যাদের দ্বারাই হোক না কেন বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে সেগুলোর নিরপেক্ষ এবং কার্যকর তদন্তের উদ্যোগ নেবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়।
এতে আরও বলা হয়, সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর দ্বারা বিরোধী দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের গ্রেপ্তার এবং আটক যেন স্বেচ্ছাচারী না হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নেয়া পদক্ষেপগুলো যেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের গণ্ডির মধ্যে থাকে সরকারকে তা নিশ্চিত করতে হবে বলে তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি আরও বলেন, একই সঙ্গে সরকারকে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, চলাফেরা ও বাকস্বাধীনতার ওপর সম্মান প্রদর্শন করতে হবে।
বাংলাদেশে অবনতি হতে থাকা রাজনৈতিক সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা সহিংসতার সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বিগ্ন যা ইতিমধ্যে নিয়মিত প্রাণহানি ঘটিয়েছে, ব্যাহত করেছে জীবনযাত্রা; যেমনটা দেখা গিয়েছিল ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগ দিয়ে।’ ওই নির্বাচন বর্জন করেছিল বিরোধী দল বিএনপি (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল)।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, নির্বিচারে যানবাহনে আগুন দেয়ার ঘটনায় বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন। মঙ্গলবার একটি গাড়িতে এ রকম হামলায় এক শিশুসহ চারজন পুড়ে মারা যাওয়ার ঘটনা এবং কালিয়াকৈরে বাসে আগুন লাগানোর ঘটনায় একজনের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও বিএনপি’র সিনিয়র এক উপদেষ্টার ওপর চালানো হামলায় তাকে গুলি এবং তার গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে বিবৃতিতে। এর আগে ২০১৩ সালে বাংলাদেশে নির্বাচনকালীন সংঘাতে প্রাণহানির ঘটনায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের তৎকালীন হাইকমিশনার নাভি পিল্লাই দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে তাদের মতপার্থক্য দূর করে অবিলম্বে ধবংসাত্মক নীতি পরিহারের আহ্বান জানিয়েছিলেন।