বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটর ডাকা টানা অবরোধ এবং সহিংসতা যদি সরকার দমন করতে না পারে তাহলে বাংলাদেশেখুব শীঘ্রই জরুরি অবস্থা জারি হতে পারে। এছাড়া সরকার নতুন করে নির্বাচন দিতে প্রস্তুত নয়। তাই সাধারন মানুষ এখন তাদের মাঝে পিষ্ট হচ্ছে।
লন্ডনের দি ইকোনমিস্ট পত্রিকাটি ‘শোডাউন ইন বাংলাদেশ অন ফায়ার’ শিরোনামে প্রতিবেদনে এমনই মন্তব্য করা হয়েছে। আজ ৬ ফেব্রুয়ারি পত্রিকাটির অনলাইন ভার্সনে এ প্রতিবেদনটি দেয়া হয়েছে।
ইকোনমিস্ট তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, একজন ৪৫ বছরের রিকশাচালক গত মাসে ঢাকা থেকে তার গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু, সে তার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। বাড়ি যাবার পথে একটি বোমা বাসের জানালা দিয়ে এসে তার কাপরের ব্যাগ এ পরে। তারপর সেই আগুনে তার মুখ ও হাত পুড়ে যায়। তার একমাসের জমানো টাকা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সে শুধু বেঁচে ছিল। এই সপ্তাহে ৮ জন লোক মারা গেছে এই পেট্রোল বোমার আঘাতে। গত এক মাসে বিএনপির ডাকা অবরোধে ৬০ জন মানুষ মারা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএনপির চেয়ারপারসন, বেগম খালেদা জিয়া যে দুইবার দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন সে তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ আছেন। তার ডাকে সারাদেশে বাস, রেল ও পানিপথে অবরোধ চলছে। গত সপ্তাহে সারাদেশে হরতাল চলেছে। গত ৫ ই জানুয়ারী থেকে এই অবরোধ এর সূত্রপাত। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ এর পুনরায় ক্ষমতার ১ বছরপূর্তি ছিল ৫ই জানুয়ারী। গত বছরের নির্বাচনকে প্রহসন এর নির্বাচন দাবি করে বিএনপি তা বয়কট করে। তা প্রতিবাদ করার ফলে বিএনপির ১০০০০ এর বেশি কর্মী আটক করা হয়। বিএনপির বেশির ভাগ নেতা আটক ও পলাতক রয়েছে। এই সপ্তাহে সরকার বেগম খালেদা জিয়ার বাড়ির কারেন্ট ও ইন্টারনেট সংযোগ কিছু সময় এর জন্য বিচ্ছিন্ন করা হয়। যাতে সে চাপে পরে হরতাল ও অবরোধ বন্ধ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু সে এই আন্দোলন চালিয়ে যাবার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ দুই দল ও দুই নেতার পারস্পরিক দ্বন্দের কারনে অকার্যকর হয়ে পড়েছে, ভুগছে প্রায় এক চতুর্থাংশ শতক অফিস ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যবসা বানিজ্য । আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসে, এবং ক্ষমতার সর্বচ্চ ব্যবহার করে এবং বিএনপি যাতে আর কখনোই ক্ষমতায় না আসতে পারে এ লক্ষে কাজ করে অপরপক্ষে একথা সত্য যে জামায়াত-ই-ইসলামীর জন্য বিএনপি প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করে । অপরপক্ষে আওয়ামীলীগ সরকার গঠনে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পতন করে বিএনপির নেতা কর্মিদের আটক করে একদলীয় সরকার কায়েম করতে চেষ্টা করে, অপরপক্ষে বিএনপি সরকারের বিরোধিতা করে সরকার একদলীয় রাষ্ট্র কায়েম করতে চায় অভিযুক্ত করে দেশব্যাপী ভাংচুর ও সন্ত্রাসবাদ চালাতে থাকে। সব দলেরই কিছু না কিছু যুক্তি আছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বেগম জিয়ার ব্যক্তিগত বিদ্বেষের কারনে নির্বাচনে অংশগ্রহন করেনি এবং নির্বাচনের বিপক্ষে অংশগ্রহণ করেন, কিন্তু সেনা হস্তক্ষেপ এর ফলে বেগম জিয়ার আন্দোলন নির্বাচনে কোন প্রকার বাঁধা প্রদান করতে পারেনা। উক্ত নির্বাচন পশ্চিমা বিশ্বে প্রচুর সমালোচনার সম্মুখীন হয় এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা দায়িত্বে বাংলাদেশের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হয়। ২০০৭ সালে যখন ২ বছরের জন্য নির্দলীয় সরকার পদ্ধতি চালু হয়েছিলো তখন দেশের রাজনীতি একটি বর্গক্ষেত্রের মধ্যে এসে পৌছেছিল।
ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বিএনপির পরিবহন অবরোধ এবং সহিংসতা যদি সরকার দমন করতে না পারে তাহলে খুব শীঘ্রই জরুরি অবস্থা জারি হতে পারে। সরকার নতুন করে নির্বাচন দিতে প্রস্তুত নয়। তাই সাধারন মানুষ এখন তাদের মাঝে পিষ্ট হচ্ছে। মোঃ বারমন বলেন, “আমরা দরিদ্র সাধারন মানুষ কোন রাজনীতি করি না, তবুও আমরা আজ অপ-রাজনীতির শিকার”।