৫২ রাজনীতি ডেস্ক।।
সরকারের ইচ্ছাতেই হরতাল-অবরোধ দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এসএসসি পরীক্ষার্থী কোমলমতি ছেলেমেয়েদের কথা চিন্তা করলে বিএনপিসহ ২০দলীয় জোটকে আন্দোলন করার সুযোগ না দিয়ে তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসতো। কিন্তু সরকার জেদ করেই সোজা পথে না গিয়ে উল্টো পথেই চলছে। ফলে দেশের মানুষের ভোগান্তির সাথে এসএসসি পরীক্ষার্থীরাও ভোগান্তিতে ভুগছে। স্থানীয় সময় গত রোববার নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের একটি রেস্তোঁরায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা এসব কথা বলেন। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা বাংলা প্রেস।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা বলেন, বিএনপি যেকোনো আলোচনার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। বিএনপি কখনই বলেননি যে শেখ হাসিনাকে কালকের মধ্যেই ক্ষমতা ত্যাগ করতে হবে এবং বিএনপি সঙ্গে সঙ্গেই ক্ষমতা দখল করে নেবে। বিএনপি চায় দেশে সুস্থ গণতান্ত্রিক অবস্থা ফিরে আসুক। সেই প্রক্রিয়ায় যদি শেখ হাসিনা অথবা অন্য কোনো শক্তি ক্ষমতায় আসে, বিএনপি তা মেনে নেবে। সরকারবিরোধী আন্দোলন দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন বিএনপির এই নেতা। তাঁর অভিযোগ, পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর উগ্র-দলবাজ সদস্যদের শান্তিপ্রিয় জনগণের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নাম উল্লেখ করে তাঁদের নিবৃত্ত হওয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানান। তিনি বলেন ‘রাষ্টীয় বাহিনীর পোশাক পরিহিত এসব ব্যক্তির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় তথ্য জনগণ সংগ্রহ করে রাখছে এবং সময়মতো সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’বলেন, বিএনপির প্রধান খালেদা জিয়া যে সাত দফা প্রস্তাব দিয়েছেন, এর ভিত্তিতে আলোচনা সম্ভব। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংলাপের ব্যাপারে কোনো আগ্রহ প্রকাশ করেননি। সাদেক হোসেন খোকা বলেন, বিরোধী জোটের সঙ্গে সরকার সংলাপে রাজি হলে চলতি সংকট এক দিনেই অবসান হতে পারে। সংলাপের প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, শীর্ষ পর্যায়ে আলাপ-আলোচনার আগে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে আলোচনা শুরু হতে পারে। বিরোধী জোটের প্রতিনিধি ছাড়াও ওই আলোচনায় সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। আলোচনা সরাসরি ও উন্মুক্ত পরিবেশে হতে পারে। তা জাতীয় টেলিভিশনে সম্প্রচার করা যেতে পারে বলেও মত দেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতা মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের সঞ্চালনায় জনকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে সাদেক হোসেন খোকা আরো বলেন, ‘বিরোধী দলের নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে সরকার একদিকে দলীয় ক্যাডারদের দিয়ে পেট্রোল বোমা মেরে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করছে। অন্যদিকে নিরীহ নেতা-কর্মীদের প্রকাশ্যে ধরে নিয়ে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বা ক্রসফায়ারের নামে সরাসরি গুলি চালিয়ে হত্যা করছে।’ তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এই হত্যাকাণ্ড থেকে সরে আসার আহ্বান জানান। তিনি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে জ্ঞানপাপী অভিহিত করে বলেন, তিনি বিএনপির প্রতি হরতাল-অবরোধ বন্ধের অনুরোধ করছেন কিন্তু তিনি প্রধানমন্ত্রীকে সংলাপে বসার অনুরোধ করছেন না কেনো? খোকা আরো বলেন, ‘পরীক্ষার চেয়ে এখন গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে অশুভ শক্তিকে হটানো। কারণ এভাবে দেশ চলতে পারে না’। তিনি বলেন, ‘যখন শেখ হাসিনা সরকার নির্বাচনের জন্য সংলাপের ঘোষণা দেবে তখনই বিএনপি অবরোধ প্রত্যাহার করবে। আজকে সংলাপের আহ্বান করলে আজকেই আন্দোলন বন্ধ করে দেয়া হবে। আমরা যে কোন সময় আলোচনার জন্য প্রস্তুত।’ তিনি বলেন, ‘এই আন্দোলনে জয়ী না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে এবং কোন আপোস নেই’।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতা আব্দুল লতিফ সম্রাট, গিয়াস আহমেদ, জিল্লুর রহমান, মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল, সিদ্দিকুর রহমান মান্না, যুবদল নেতা আবু সাঈদ আহমেদ, ছাত্রদল নেতা আতাউর রহমান আতা প্রমুখ। এসএসসি পরীক্ষার মধ্যেও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সাদেক হোসেন খোকা শিক্ষার্থীদের অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন দেশ এবং গণতন্ত্রের স্বার্থে বিএনপিকে এই কর্মসূচি পালন করতে হচ্ছে।‘তিনি পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, এসএসসি পরীক্ষাতো বিএনপি নেতা-কর্মীদের ছেলেমেয়েরাও দিচ্ছে। তিনি দাবি করেন, এসব ছাত্রছাত্রীর পরিবারের বড় একটা অংশ বিরোধী দলের আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতিশীল। খোকার ভাষ্য, সরকার এসএসসি পরীক্ষাকে একটি ‘ইনস্ট্রুমেন্ট’ হিসেবে ব্যবহার করছে, যাতে বিরোধী দল বেকায়দায় পড়ে এবং আন্দোলনে ক্ষান্ত দেয়। বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান দাবি করেন, বিশ্ব ইজতেমার সময়ও আন্দোলন অব্যাহত ছিল। সব অসুবিধা সত্ত্বেও ইজতেমার নেতারা আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন। ব্যক্তিগত চিকিৎসার জন্য খোকা বর্তমানে নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন।