বুধবারের মধ্যে সব ব্যাংকের সব শাখার প্রধানদের বাংলাদেশ ব্যাংকের এ নির্দেশনা জানিয়ে দিতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এবং বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান দেশে কার্যরত সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠক করে এ নির্দেশ দেন।
লিখিত বক্তব্যে ব্যাংকারদের উদ্দেশ্যে রাজী হাসান বলেন, “আপনাদের ব্যাংক যাতে কোনভাবে সন্ত্রাসে অর্থায়নে ব্যবহৃত হতে না পারে বা কোন সন্ত্রাসী যাতে আপনার ব্যাংকের মাধ্যমে কোন লেনদেন না করতে পারে তার জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
“এ লক্ষ্যে আপনারা আগামীকালের (১১ ফেব্রুয়ারী, বুধবার)মধ্যে সকল শাখা ব্যবস্থাপককে সতর্কতামূলক বার্তা প্রেরণ করবেন যাতে সকল ব্যবস্থাপক শাখার সকল কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করেন।
“শাখার কর্মকর্তাগণ প্রধান নির্বাহীর বার্তাটি অবহিত কিনা- তা ভালোভাবে যাচাই করে দেখবেন যাতে বিএফআইইউ বা বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে গিয়ে নিশ্চিত হতে পারেন।”
গত ৫ ফেব্রুয়ারি জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থ যোগানদাতাদের চিহ্নিত করতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পাশাপাশি জঙ্গি অর্থায়ন বন্ধে কঠোরভাবে ব্যাংক লেনদেন পর্যবেক্ষণ করারও নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
অর্থ মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করে কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সন্ত্রাসী ও জঙ্গি তৎপরতায় পৃষ্ঠপোষকরা দেশে ও দেশের বাইরে অর্থ স্থানান্তরে এখনো ব্যাংকগুলোকে ব্যবহার করছে।… এজন্য ব্যাংকের লেনদেন নিবিড়ভাবে মনিটর করা উচিৎ এবং সন্ত্রাসে অর্থায়নকারীদের চিহ্নিত করা প্রয়োজন।”প্রধানমন্ত্রীর ঐ নির্দেশের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের ডেকে সতর্ক করে দিল বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা।
ডেপুটি গভর্নর বলেন, ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও নিরীক্ষা বিভাগ এবং কেন্দ্রীয় পরিপালন ইউনিট সন্ত্রাসে অর্থায়নে ঝুঁকিপূর্ণ জেলাসমূহে কার্যরত ব্যাংকের শাখাসমূহের গ্রাহকদের গত ছয় মাসের লেনদেন পর্যালোচনা করবে।
“পর্যালোচনায় পরিলক্ষিত অস্বাভাবিক/সন্দেহজনক লেনদেন দ্রুত বিএফআইইউতে রিপোর্ট করবে এবং পরির্দশনকৃত শাখার বিষয়ে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে রিপোর্ট করবে।
“প্রধান নির্বাহী স্ব স্ব ব্যাংকে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ ব্যবস্থা যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে মর্মে নিশ্চিত হওয়ার আইনী বাধ্যবাধকতার বিষয়টি মাথায় নিয়ে অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও নিরীক্ষা বিভাগ কর্তৃক বা প্রয়োজনে একটি আলাদা টিম গঠন করে ব্যাংকের সামগ্রিক পরিপালন ব্যবস্থা মূল্যায়ন করবে।”
২০১৫ সালের মার্চের মধ্যে একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন বিএফআইইউতে দাখিল করতে নির্দেশ দেন ডেপুটি গভর্নর।
ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করে রাজী হাসান বলেন, কোনো ব্যাংক মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন নীতিমালা পরিপালনে ব্যর্থ হলে বিএফআইইউ অনধিক ২৫ লাখ টাকা জরিমানা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শাখা, সেবাকেন্দ্র, বুথ বা এজেন্টের লাইসেন্স স্থগিত করতে পারে।
তাছাড়া কোন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বা ব্যবস্থাপনা পরিচালক অর্পিত দায়িত্ব পালন না করলে চেয়ারম্যান বা প্রধান নির্বাহীকেও অনধিক ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করতে পারে।“এমনকি পদ হতে অপসারণ করতে পারে বিএফআইইউ।”
মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মেলন কক্ষে এ সভা হয়।
সভা শেষে ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান সাংবাদিকদের বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে সহিংসতার আর্থিক লেনদেন না হয় সে লক্ষ্যে ব্যাংকগুলোকে প্রচলিত আইন-কানুন সঠিকভাবে মেনে চলতে বলা হয়েছে। বুধবারের মধ্যে এ নির্দেশনা প্রতিটি ব্যাংককে শাখা পর্যায়ের সকল কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়ে জানাতে বলা হয়েছে।”
এক প্রশ্নের জবাবে ডেপুটি গভর্নর বলেন, “সহিংসতায় অর্থায়ন হচ্ছে কিনা, কয়েকটি সংস্থা থেকে তা জানতে চেয়েছে। আমরা ব্যাংকগুলোকে বলেছি, যেসব এলাকায় বেশি নাশকতা হচ্ছে সেসব এলাকার ৬ মাসের লেনদেনের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখতে।
“সন্দেহজনক কোন কিছু পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক সেগুলো জানাতেও বলা হয়েছে। এর কোনো ধরনের ব্যতয় ঘটলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”