৫২ জাতীয় ডেস্ক।।
হরতাল-অবরোধে বাস চালানোর জন্য বেসরকারি পরিবহন মালিকদের অনুরোধ করা হচ্ছে। নিরাপত্তা প্রহরায় সীমিত পরিসরে চলছেও সেগুলো। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি)। দূরপাল্লার সব রুটের বাসই বসিয়ে রেখেছে সংস্থাটি। এর প্রভাব পড়েছে তাদের আয়ে। গত ৪০ দিনে বিআরটিসির আয় কমেছে প্রায় ২০ কোটি টাকা।
এদিকে বিআরটিসির দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় অনেকটাই ক্ষুব্ধ বেসরকারি পরিবহন মালিকরা। সম্প্রতি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগও করেন তারা।
জানা গেছে, রাজধানীর মতিঝিল থেকে আট ও কল্যাণপুর থেকে চারটি রুটে বিআরটিসির দূরপাল্লার বাস চলাচল করে। আর ঢাকার বাইরে রংপুর থেকে ২২, কুমিল্লা থেকে পাঁচ, পাবনা থেকে ১৯, বগুড়া থেকে ২৫, চট্টগ্রাম থেকে পাঁচ, বরিশাল থেকে ১২, সিলেট থেকে দুই, খুলনা থেকে নয়, নরসিংদী থেকে তিন ও নারায়ণগঞ্জ থেকে দুটি রুটে দূরপাল্লার বাস চালায় সংস্থাটি। এসব রুটে এসি, নন-এসি মিলে বাস রয়েছে ৪৭০-৪৮০টি। কিন্তু বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের চলমান অবরোধ ও হরতালের কারণে সব রুটের বাসই বন্ধ রেখেছে রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন সংস্থাটি।
বিআরটিসির পরিচালক (প্রশাসন ও অপারেশন) মো. শামসুল আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমাদের কাছে সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে যাত্রীদের নিরাপত্তা। তাই দূরপাল্লার বাস চালানোয় কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। তবে বিআরটিসির দূরপাল্লার বাস সার্ভিস পুরোপুরি বন্ধ— বিষয়টি সঠিক নয়।’
বিআরটিসির তথ্যমতে, গত ৫ জানুয়ারি থেকে দূরপাল্লার রুটের প্রায় সব বাসই বন্ধ রয়েছে। একই সঙ্গে দুটি ট্রাক ডিপোর ১১৮টি ট্রাক চলাচলও বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে গত ৪০ দিনে বিআরটিসির রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে ২০ কোটি টাকার বেশি। এ হিসাবে দৈনিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫০ লাখ টাকা। এছাড়া সংস্থাটির ৩০টি বাস ভাংচুর ও ১১টিতে আগুন দেয়া হয়েছে। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৮৮ লাখ টাকা।
বিআরটিসির একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অবরোধে গাড়ি চলাচল কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এ কারণে সংস্থার আয়ও কমে গেছে। সাধারণ সময়ে বাস ও ট্রাক থেকে প্রতি মাসে ২৩-২৪ কোটি টাকা আয় হলেও হরতাল-অবরোধের কারণে তা নেমে এসেছে ৭-৮ কোটি টাকায়। তবে বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও সংস্থার মাসিক ব্যয় রয়েছে ২০-২১ কোটি টাকা। এজন্য বড় অঙ্কের লোকসান দিতে হচ্ছে।
এদিকে চার বছরের মধ্যে চলতি বছর জানুয়ারিতেই বিআরটিসির আয়ে ঘাটতি দেখা দেয়। গত মাসে সংস্থাটির এ ঘাটতি ছিল ২ কোটি ১০ লাখ ১৩ হাজার টাকা। অথচ ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচনকালীন অস্থিরতা সত্ত্বেও বিআরটিসির আয়ে ৯০ লাখ ৮২ হাজার টাকা উদ্বৃত্ত ছিল। এছাড়া ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে ১ কোটি ১৬ লাখ ২৯ হাজার ও ২০১২ সালের একই সময়ে উদ্বৃত্ত আয় ছিল ৫৯ লাখ ২৬ হাজার টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ বা নরসিংদীর মতো কাছাকাছি শহরতলি রুটে সীমিত পরিসরে বিআরটিসির কিছু বাস চালানো হচ্ছে।
একেই দূরপাল্লার সার্ভিস বলছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা। প্রকৃতপক্ষে সংস্থাটির সচল ৯৫০টি বাসের মধ্যে দূরপাল্লার প্রায় ৫০০টিই বসিয়ে রাখা হয়েছে। এমনকি রাজধানীতেও নাশকতার কথা বলে বিভিন্ন স্থানে কাউন্টার বন্ধ রেখেছে বিআরটিসি। সীমিত করে আনা হয়েছে রাজধানীতে বাস চলাচলও।
বিআরটিসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, বিআরটিসির সব বাসই ঋণে কেনা। আবার এগুলো চালানোর জন্য তৃতীয় পক্ষের বীমা করা হয়েছে। এ অবস্থায় হরতাল-অবরোধে বাস পুড়িয়ে দিলে এর দায়ভার বিআরটিসির কাঁধেই পড়বে। এছাড়া ভাংচুর করা হলেও মেরামতের জন্য নিয়মিত অর্থ পাওয়া যায় না। এসব বিষয় বিবেচনা করে দূরপাল্লার বাস চালানো হয় না।
তবে পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, বিআরটিসির বেশির ভাগ বাসই ইজারা দেয়া। একবার বাস পুড়ে গেলে ঠিকাদারদের লোকসান হবে। তাই প্রধান কার্যালয় থেকে বলা হলেও তা কোনো কাজে আসছে না।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব ও এনা পরিবহনের স্বত্বাধিকারী খন্দকার এনায়েত উল্লাহ অভিযোগ করেন, হরতাল-অবরোধে দূরপাল্লার রুটে বাস চালানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ করা হয়। এজন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার আশ্বাসও দেয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে মহাসড়কে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির প্রহরায় বেসরকারি পরিবহন কোম্পানিগুলো বাস চালানো শুরু করে। কয়েক দিন ধরে রাতের পরিবর্তে দিনে বাস চালানো হচ্ছে। কিন্তু বিআরটিসি কখনই তাদের বাস নামাচ্ছে না। আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকেও এ বিষয়ে অভিযোগ করা হয়েছে। তার পরও বিআরটিসির কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিআরটিসির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, বিআরটিসির দূরপাল্লার বাস বন্ধ নেই। প্রথম কয়েক দিন বন্ধ থাকলেও পরবর্তীতে সব ডিপোয় নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। তবে যাত্রী না থাকায় ট্রিপ কমে গেছে। এতে আয়ও কিছুটা কমেছে।
উল্লেখ্য, ৯ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে বৈঠক করেন পরিবহন মালিকরা। ওই বৈঠকেই রাতের পরিবর্তে দিনে নিরাপত্তা প্রহরায় দূরপাল্লার বাস চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে রাতেই বেশির ভাগ দূরপাল্লার বাস চলাচল করত। তবে রাতে নাশকতা বেড়ে যাওয়ায় সরকারি নির্দেশনায় এখন দিনে বাস চালাচ্ছেন পরিবহন মালিকরা।